Connect with us

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

কান ২০২৩: অস্কারজয়ী অভিনেত্রীর প্রযোজনায় আফগান নারীদের গোপনে শুটিং করা প্রামাণ্যচিত্র

সিনেমাওয়ালা ডেস্ক

Published

on

জেনিফার লরেন্স (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর তালেবানরা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। ঠিক সেই সময় অস্কারজয়ী অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স এবং প্রযোজক জাস্টিন সিয়ারোকি ভাবছিলেন, স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ হওয়া আফগান নারীদের অধিকার রক্ষায় তারা কী ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা ২০১৮ সালে এক্সিলেন্ট ক্যাডাভার নামের একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করেন।

জেনিফার লরেন্স (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

জেনিফার লরেন্স সিদ্ধান্ত নেন, একজন আফগান ফিল্মমেকার খুঁজে বের করে অর্থবহ হবে এমনভাবে এই গল্প বলার জন্য তাকে একটি প্ল্যাটফর্ম দেবেন। তারা অবশেষে পরিচালক সাহরা মানিকে খুঁজে পান। ২০১৮ সালে তার ‘অ্যা থাউজেন্ড গার্লস লাইক মি’ প্রামাণ্যচিত্রে ন্যায়বিচারের সন্ধানে থাকা ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীর কথা বলা হয়েছে। বাবার হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর পরিবার ও পুলিশের কাছে উপেক্ষিত হয় মেয়েটি। এরপর জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে নির্যাতনের কথা প্রকাশ করে সে।

জাস্টিন সিয়ারোকি, একজন অতিথি, জেনিফার লরেন্স ও সাহরা মানি (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

‘অ্যা থাউজেন্ড গার্লস লাইক মি’ দেখেছিলেন জেনিফার লরেন্স ও জাস্টিন সিয়ারোকি। সেই সূত্রে সাহরা মানির সঙ্গে যোগাযোগ করেন তারা। তাদের প্রযোজনায় আফগান এই নারী নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্যচিত্র ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৭৬তম আসরে স্পেশাল স্ক্রিনিং শাখায় গতকাল (২১ মে) এর প্রিমিয়ার হয়েছে। পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের আনিয়েস ভারদা থিয়েটারে স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে ছিলো এই প্রদর্শনী। আজ (২২ মে) সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বুনুয়েল থিয়েটারে এবং দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে সিনিয়াম স্ক্রিন টেনে আবার দেখানো হয় এটি।

জেনিফার লরেন্স (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

প্রিমিয়ারের আগে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের সামনে লালগালিচায় হেঁটেছেন জেনিফার লরেন্স। তার সঙ্গে ছিলেন আরেক প্রযোজক জাস্টিন সিয়ারোকি, পরিচালক সাহরা মানিসহ প্রামাণ্যচিত্রটির কলাকুশলীরা।

জেনিফার লরেন্সের সঙ্গে ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ প্রামাণ্যচিত্রের কলাকুশলীরা (ছবি: টুইটার)

তালেবানের পুনরুত্থানের পর ব্যক্তিস্বাধীনতা না থাকা নারীদের মধ্যে তিনজনের যন্ত্রণাদায়ক দৈনন্দিন জীবন তুলে ধরা হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রটিতে। দুর্দশা থেকে আফগান নারীদের দ্রুত উতরে ওঠার সক্ষমতা ও মনোবল দেখাতে চেয়েছেন পরিচালক সাহরা মানি।

সাহরা মানি, জেনিফার লরেন্স, একজন অতিথি ও জাস্টিন সিয়ারোকি (ছবি: টুইটার)

যদিও কাবুলে প্রামাণ্যচিত্রটির শুটিংয়ের দিনগুলোতে পরতে পরতে ছিলো বিপদ। এর মধ্যেই চিত্রগ্রাহক আব্দুল সামি মুর্তজাসহ ক্যামেরা ক্রু এবং শুটিংয়ে অংশ নেওয়া নারীসহ অন্যান্যদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

জেনিফার লরেন্স ও জাস্টিন সিয়ারোকি (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

নারীদের নিরাপত্তা দিয়ে তাদেরই গল্প বলার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ ছিলো না মোটেও। এজন্য জেনিফার লরেন্স, জাস্টিন সিয়ারোকি ও সাহনা মানি রাতের পর রাত আলোচনা করেছেন। সাহরা মানিসহ প্রামাণ্যচিত্রটিতে অংশগ্রহণকারী নারীরা কাবুল ছেড়েছেন। তাই কানে এটি উপস্থাপনে অস্বস্তি কাজ করেনি প্রযোজকদ্বয়ের।

জাস্টিন সিয়ারোকি, একজন অতিথি, জেনিফার লরেন্স ও সাহরা মানি (ছবি: টুইটার)

সাহরা মানি এখন ফ্রান্সে বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘তালেবানদের অধীনে আফগান নারীদের জীবন যেভাবে বদলেছে সেটি আমাদের দৈনন্দিন বাস্তবতা। স্বৈরাচারের অধীনে থাকা জীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতা আমরা কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারি না।’

জাস্টিন সিয়ারোকি, একজন অতিথি, জেনিফার লরেন্স ও সাহরা মানি (ছবি: টুইটার)

কান উৎসবের প্রিমিয়ারে সাহরা মানি বলেন, ‘আমাদের প্রামাণ্যচিত্রে আফগান নারীদের একটি শান্ত বার্তা রয়েছে। দয়া করে তাদের পক্ষে কথা বলুন, যারা তালেবান স্বৈরতন্ত্রের অধীনে নির্বাক।’

জেনিফার লরেন্সের সঙ্গে ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ প্রামাণ্যচিত্রের কলাকুশলীরা (ছবি: টুইটার)

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাহরা মানি উল্লেখ করেন, তালেবানের অধীনে আফগান নারীদের জীবনে কতটা আমূল পরিবর্তন এসেছে, তিনি সেই বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন। তার কথায়, ‘এখন নারীরা পর্দা ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারে না। তাই আমি ভাবলাম, তাদের গল্প বলা প্রয়োজন।’

‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ প্রামাণ্যচিত্রের দৃশ্য (ছবি: এক্সিলেন্ট ক্যাডাভার)

মোবাইল ফোন দিয়ে লুকিয়ে ধারণকৃত একটি দৃশ্যে দেখা যায়, এক তরুণী তালেবান সেনাকে বলছেন, ‘তোমরা শুধু নারী নির্যাতন করো।’

এর উত্তরে তালেবান যোদ্ধা চিৎকার করে বলে, ‘আমি তোমাকে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম। তোমাকে এখানেই মেরে ফেলব!’

জেনিফার লরেন্স ও জাস্টিন সিয়ারোকি (ছবি: টুইটার)

মেয়েটিও তখন গলা উঁচিয়ে বলেন, ‘ঠিক আছে, আমাকে মেরে ফেলো! তোমরা স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছো! আমাকে মেরে ফেলাই ভালো!’

এমন প্রতিবাদের পর ওই তরুণীকে গ্রেফতার করে কাবুলের একটি হোল্ডিং সেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ প্রামাণ্যচিত্রের দৃশ্য (ছবি: এক্সিলেন্ট ক্যাডাভার)

আরেকটি দৃশ্যে দেখা যায়, কাবুলে রাস্তার পাশে জানালাহীন বেজমেন্টে গোপন বৈঠক করছেন নারীরা। অস্থায়ী ক্লাসরুমের মতো সাজানো টেবিল-চেয়ারে একডজনেরও বেশি নারী বসে আছেন। তাদের প্লাস্টিকের কাপে চায়ের ধোঁয়া উঠছে। তারা একে অপরকে চেনে না। তবে তারা সবাই তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্য। গোপন বৈঠকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দন্তচিকিৎসক জাহরা। তিনি উঁচু হিল ও পারফিউম ব্যবহার এবং বন্ধুদের সঙ্গে পার্কে যাওয়ার কথা দিনগুলোর কথা বলেন। তখন অন্য নারীদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এরপর বাহিদা নামের একজন লেখক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, নারীদের নিজেদের কথা নিজেদেরই লিখতে হবে।

একজন অতিথির সঙ্গে সাহরা মানি (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

১৯১১ সালে লেখা আমেরিকান কথাসাহিত্যিক জেমস ওপেনহাইমের কবিতা থেকে ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ নামটি নিয়েছেন সাহরা মানি। তার প্রামাণ্যচিত্রটিতে আফগান নারীদের মুখে শোনা যায়, ‘জীবিকা, পেশা, শিক্ষা এবং স্বাধীনতা!’ তিনি বলেন, ‘তারা এটাই চায়। তারা মৌলিক অধিকার চায়। প্রামাণ্যচিত্রের নামে থাকা গোলাপ স্বাধীনতা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের প্রতীক হতে পারে।’

Advertisement

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ