Connect with us

আলাপচারিতা

শোবিজে সততার বড় অভাব, আমরা লেনদেন ঠিক রাখি না: সিমিত রায় অন্তর

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

সিমিত রায় অন্তর (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমা নির্মাণের পোস্ট-প্রোডাকশন প্রক্রিয়ার সৃজনশীল ও ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর অংশ হলো সম্পাদনা। এটি একটি শিল্প। সম্পাদকের দক্ষতায় সিনেমা কিংবা ফিকশন প্রাণ পায়। দেশে ইদানীং ভিডিও সম্পাদনা করে আলোচিতদের মধ্যে অন্যতম সিমিত রায় অন্তর। ভিডিও সম্পাদনায় ক্যারিয়ার গড়া এবং এই পেশার শিল্পীদের কাজের পরিধি ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় কথা বলেছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনি সিনেমার রিভিউ লিখতেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রুপও ছিল। সিনেমা সম্পাদনায় ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবলেন কীভাবে?
সিমিত রায় অন্তর: সিনেমার রিভিউ লিখতাম কিনা জানি না! যেকোনো সিনেমা দেখার পর আমার ভাবনায় ভালো-মন্দ যা যা আসতো, সেসবই লিখতাম। রিভিউ লেখার জন্য প্রয়োজনীয় গুণ কিংবা যোগ্যতা আমার আছে বলে মনে করি না।

সত্যি বলতে, আমি হতে চেয়েছিলাম অভিনেতা। কিন্তু হয়ে গেলাম পরিচালক। টিভি নাটক পরিচালনা করতে গিয়ে দেখলাম– অনেক প্রতিবন্ধকতা, বাধা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়। যেগুলো আমাকে দিয়ে হচ্ছিলো না। তাই চারটি নাটক বানানোর পর মনে হলো– আমি বোধহয় এখানে টিকে থাকতে পারবো না।

সম্পাদনায় আসা অনেকটা পেটের টানে। আগে শুধু নিজের কাজগুলো সম্পাদনা করতাম। বাইরের যারা আমার প্রিয়, তাদের অনুরোধে শুধু অন্য কাজ করতাম। কিন্তু একসময় যখন সব পথ বন্ধ হয়ে গেলো, তখন দেখলাম– সম্পাদনা করেই আমাকে পেট চালাতে হচ্ছে। সেখান থেকেই আজ এ পর্যন্ত আসা।

সিমিত রায় অন্তর (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: আপনি নাটক-টেলিফিল্ম লিখেছেন, পরিচালনাও করেছেন। সম্পাদনায় থিতু হওয়ার কারণ তাহলে অর্থনৈতিক?
সিমিত রায় অন্তর: হ্যাঁ, সম্পাদনায় নিয়মিত হওয়ার কারণ মূলত অর্থনৈতিক। তবে এখন সম্পাদনার কাজ উপভোগ করছি। প্রথমে চাইতাম না সম্পাদক হিসেবে আমার পরিচিতি হোক। তবে এখন উপভোগ করি ব্যাপারটা। আগামীতে আবার পরিচালনা করার ইচ্ছে আছে। এমন একটা ক্ষুধা থাকতেই পারে। আমারও আছে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সময় বের করতে পারছি না। ইচ্ছে আছে– প্রতি বছর একটি করে বড় পরিসরের কাজে সম্পৃক্ত হওয়া, যাতে আমার মধ্যে থাকা পরিচালনার ক্ষুধাটা মেটে।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সম্পাদকরা পরিচালক হলে বাড়তি কোনো সুবিধা যোগ হয়?
সিমিত রায় অন্তর: সম্পাদনা যারা করেন তারা পরিচালনায় এলে অবশ্যই ভালো। কারণ তিনি ভালোভাবেই জানেন– কোন শট কাজের আর কোনটি লাগবে না৷ সম্পাদনার ব্যাপারে কারো যদি সামান্য জ্ঞানও না থাকে তাহলে দেখা যায়– অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য ধারণ করে এডিটিং প্যানেলে পাঠানো হয়, যেগুলো লাগবেই না। আর যেসব দৃশ্য গুরুত্বপূর্ণ সেসবের শুটিংই করা হয় না! তখনই মূলত বিপত্তি বাঁধে। সম্পাদনা জানলে বোঝা যায় কতোটুকু কী লাগবে। তখন আর প্রয়োজনের বাইরে দৃশ্যধারণ করতে গিয়ে সময় নষ্ট হয় না।

সিমিত রায় অন্তর (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: যিনি সম্পাদনা করেন তাকে রঙ বিন্যাসের দায়িত্ব দিলে কি ভালো? নাকি খরচ বাঁচাতে সম্পাদনা যিনি করেন তাকেই রঙের কাজ করতে দেওয়া হয়?
সিমিত রায় অন্তর: ভিডিও সম্পাদককে যদি রঙ বিন্যাসের দায়িত্বও দেওয়া হয় তাহলে ফিকশন মোটেও ভালো হয় না। শুধু কিছু টাকা বাঁচাতেই এমন করা হয় কিংবা ঝামেলা এড়াতে একসঙ্গে সম্পাদনা ও রঙ বিন্যাসের প্যাকেজ দেওয়া হয়। দুটোর সঙ্গে ভালো-মন্দের কোনো সম্পর্ক নেই।

পরিপূর্ণ একটি প্রোডাকশন তৈরির জন্য যেসব বিষয় প্রয়োজন এবং সেজন্য যত বাজেট লাগে সেগুলো এখনো আমরা ঠিক করতে পারিনি। কম খরচের মধ্যে কিভাবে সবকিছু করা যায়, সবাই মূলত সেটাই ভাবে। আর রঙের ব্যাপারটা এখনো আমরা খুব ভালো বুঝতে পেরেছি বলে আমার মনে হয় না।

এমন অনেকে আছেন, শুটিং করে এনে নির্দিষ্ট রঙ দিতে বলেন। কিন্তু কালার তৈরি করতে হয় শুটিং সেটে। সেখানকার কস্টিউম, লাইট ও সেট ঠিক করে দেয় কোন রঙ মানানসই হবে। এডিটিং প্যানেলে এসে সেভাবে রঙ হয় না। এগুলো আমাদের আরো শিখতে হবে, জানতে হবে। এজন্য হয়তো আরো সময় লাগবে।

সিমিত রায় অন্তর (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সিনেমা সম্পাদনা করে সচ্ছল জীবনযাপন করার পরিস্থিতি কি তৈরি হয়েছে আমাদের শোবিজে?
সিমিত রায় অন্তর: না, হয়নি। কারণ শোবিজে সততার বড় অভাব। প্রায় সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। কারণ আমরা লেনদেন ঠিক রাখি না। আমি শোবিজে অল্প কিছু কাজ করেছি। তারপরও বাজারে আমার ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা বাকি পড়ে আছে। পাওনার জন্য আমাকে বারবার ফোন ও মেসেজ দিতে হয়। না পেরে তাদের সঙ্গে মেজাজ খারাপ করি। এ কারণে সম্পর্ক নষ্ট হয়। তখন খুব খারাপ লাগে।

আমাদের ছোট্ট শোবিজ অঙ্গনে অল্প কিছু মানুষ কাজ করি, আমাদের কেনো এমন অবস্থা হবে? আমাদের আরও উন্নত হওয়া উচিত। পেশাদারি হওয়া প্রয়োজন সবার। সম্পাদনায় এখন যারা কাজ করছেন তাদের অনেকে শখের বশে করছেন বলে হয়তো তেমনভাবে কিছু বলছেন না। কিন্তু এভাবে চললে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়বে।

সিমিত রায় অন্তর (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: এখন পর্যন্ত কয়টি সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এবং ফিকশন সম্পাদনা করেছেন?
সিমিত রায় অন্তর: পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার মধ্যে রায়হান রাফীর ‘‌পরাণ’, ‘‌দামাল’, ‘‌নূর’ ও ‘‌সুড়ঙ্গ’ সম্পাদনা করেছি। ওটিটিতে মিজানুর রহমান আরিয়ানের ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’ এবং ‘‌টান’ ও ‘‌খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’সহ রায়হান রাফীর যতো কাজ আছে সবক’টির সম্পাদনা আমার করা। আগে নাটক সম্পাদনা করতাম। এছাড়া বেশকিছু ফিকশনের কাজ করেছি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: সম্পাদনায় কারা আপনার আইডল?
সিমিত রায় অন্তর: সম্পাদনায় আমার কোনো আইডল নেই। সেভাবে কাউকে চিনিও না। আমি নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছি। অনেকে আছেন যারা সমিতিতে সময় দেন। সেসব সংগঠনে আমাকে যুক্ত করানো হয়। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। তবে কোনো কাজ আমার ভালো লাগলে টাইটেলে খুঁজে দেখি কাজটি কে করেছেন। যদিও পরে আর সেটা মনে থাকে না।

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ