আলাপচারিতা
‘ওটিটি হলো নিজস্ব পছন্দ, সিনেমা হলের সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না’
চার দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চনাটক, টেলিভিশন ও সিনেমায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নন্দিত অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক তারিক আনাম খান। অভিনয়ে দীর্ঘ ক্যারিয়ার তার। দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই অভিনেতা এবারের ঈদ উপলক্ষে কয়েকটি কাজ করেছেন। এ তালিকায় আছে বঙ্গবিডি ওয়েবের জন্য আশিকুর রহমান পরিচালিত ‘সাদা প্রাইভেট’, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের সিনেমাওয়ালার জন্য ‘নয়া লায়লা নয়া মজনু’ ও ‘লাইক ফাদার লাইক সান’ এবং প্রসূন রহমানের রচনা ও পরিচালনায় আরটিভির ওয়েব ফিল্ম ‘জিরো পয়েন্ট’। সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছেন গুণী এই অভিনেতা-নির্মাতা।
সিনেমাওয়ালা নিউজ: একসময় আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ পড়তাম। এখন ফেসবুক-টুইটার-ইনস্টাগ্রামে চোখ বুলাই। এক্ষেত্রে আপনার মতামত কী?
তারিক আনাম খান: শুরুতেই স্বীকার করে নিতে হচ্ছে, আমি নিজেও মাঝে মধ্যে এসব করি। সত্যি বলতে সময়ের সঙ্গে মানুষ চলে, সময়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায় সবাই। কিন্তু আমি পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ায় বিশ্বাসী নই। কেননা পত্রিকা মানে ছাপা আকারে যেসব রিপোর্ট হয়, সেগুলোর একটা অথেনটিসিটি থাকে, রেকর্ড থাকে, আর্কাইভ ভ্যালু থাকে। ছাপা খবরের সঙ্গে দৃষ্টি ও মস্তিষ্কের মধ্য দিয়ে আমাদের যে সম্পৃক্ততা গড়ে ওঠে তাতে অন্য একটা জায়গা তৈরি হয়। মানুষ ব্যক্তিগত জায়গা থেকে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে। পত্রিকায় খবর পড়া নিখাদ একটা ব্যাপার। কারণ এর মাঝে দায়িত্বশীলতা থাকে। কিন্তু ফেসবুকে দায়িত্বশীলতার অভাব আছে বলে আমার মনে হয়। আমি ফেসবুকে তখনই যাই যখন মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো নিউজ আছে, বিশেষ করে সমাজের কোনো দুঃসংবাদ বা কারও সুসংবাদ পেলে সেসবের খোঁজ নিতে ফেসবুকে যাই।
সিনেমাওয়ালা নিউজ: নিজের অভিনীত নাটক কি ইউটিউবে বেশি দেখেন?
তারিক আনাম খান: টিভিতে নাটক দেখার জন্য যত সময় প্রয়োজন সেটি মেলে না। শুটিং থাকে, না হয় মহড়া বা মিটিং থাকে। ইউটিউবের সুবিধা হলো, আমার নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে আছে। আমি চাইলে সকাল-দুপুর-বিকাল যেকোনো সময় দেখে নিতে পারবো। একই বিষয় ওটিটির ক্ষেত্রেও। যখন মনে চাইবে তখন দেখে নিতে পারবো। কিন্তু টেলিভিশন নাটকের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। তবে আমার কাছে এখনও মোবাইলে নাটক দেখে মজা লাগে না। নাটক এখনও টেলিভিশনের বিষয়, টেলিভিশনেই দেখা উচিত। পরিবার নিয়ে যখন দেখা হয়, ওইটার মজা আর একা ফোনের মধ্যে দেখা আকাশ-পাতাল তফাৎ। কেউ হয়তো পাশ থেকে বলবে ভালো হয়েছে, কেউ বলবে ভালো হয়নি। তবে এখন ঘাড় নিচু করে মোবাইল ফোনে দেখে বলা যায় না ভালো হয়েছে কী হয়নি। ছোট স্ক্রিন বরাবরই ছোট স্ক্রিন।
সিনেমাওয়ালা নিউজ: সেই ১৯৭৩-৭৪ সালে অভিনয় শুরু করেছিলেন। এখনও আপনি ফিট। প্রতিদিন ব্যায়াম করেন?
তারিক আনাম খান: যতটুকু ব্যায়াম করলে নিজের স্বাভাবিক জীবন ছন্দে রাখা যায় ততটুকুই করি। অভিনয় যেহেতু আমার পেশা, সেক্ষেত্রে নিজেকে যদি ফিট না রাখি, সেটে গিয়ে ঘুমাই, কাজের স্পৃহা না থাকে তাহলে পেশাদার জগত আমাকে গ্রহণ করবে না। এটি খুব সোজাসাপ্টা কথা। আমি অভিনয় করি এবং বিনিময়ে টাকা পাই। আমি মনে করি, পেশাদারিত্বের বড় দিক হলো নিজেকে কার্যকর এবং তৈরি করে রাখা।
শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও বর্তমান সময়ের সঙ্গে মানানসই থাকা দরকার। অভিনয়ের ২০ বছর আগের ট্রেন্ড এবং সাম্প্রতিক সময়ের ট্রেন্ড কিন্তু বদলেছে। সেই ট্রেন্ড যদি ধরতে না পারি তাহলে পিছিয়ে পড়বো। তাছাড়া অভিনয় এখন অনেক বেশি মস্তিষ্ক প্রসিদ্ধ, চিন্তা-চেতনা থেকে আসে। আগে অনেক আবেগ দিয়ে এটি হতো। বাংলাদেশের নাটক ও সিনেমা দেখেছি, এখন অনেক সূক্ষ্ণ হয়ে গেছে। সেভাবে মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে, বর্তমান সময়ের সঙ্গে মিশতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ নবীনদের সঙ্গে আমার অনেক ভালো পারস্পরিক আদান-প্রদান হয়। এটি খুব দরকার। একইসঙ্গে যেহেতু আমি একটু বয়স্কদের কাতারে চলে গেছি, তাই শারীরিকভাবে ফিট থাকা জরুরি। কিন্তু বয়সের একটা ভার তো আছেই। আমি চাইলেও পাঁচ মাইল দৌড়াতে পারবো না। তাই আমাকে নিয়ে নির্মাতাদের সেরকম করেই ভাবতে হবে।
সিনেমাওয়ালা নিউজ:সাম্প্রতিক সময়ে হাঁটুর বয়সী নায়িকাদের নায়ক হয়েছেন আপনি। এর অনুভূতি কেমন?
তারিক আনাম খান: যখন অভিনয় করি তখন আমার সহশিল্পী পিচ্চি নাকি নায়িকা তা ভাবি না। আমার কাছে প্রতিটি মানুষ সমান। আমার কাছে যেসব চরিত্র আসে সেগুলো আমার কাছে স্রেফ চরিত্র। সেগুলোকে চরিত্র হিসেবেই দেখি। আর অভিনয়টা ওই মুহূর্তে জীবন্ত করাটাই আমাদের শিল্পীদের কাজের মধ্যে পড়ে। সেজন্য এমন নয় যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে নায়িকার সঙ্গে আমাকে প্রেম করতে হবে। তখন আমার জীবনের অভিজ্ঞতা টেনে আনি। সেটি হতে পারে আমার সমবয়সী প্রেম। অভিনয়ের ক্ষেত্রে সত্যিকারের আবেগটা দিতে হলে ওই মুহূর্তে বাকি সব ভুলে যাওয়াটা জরুরি মনে হয়।
সিনেমাওয়ালা নিউজ:আপনাকে কি নির্মাতারা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পেরেছেন?
তারিক আনাম খান: বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু কাজ পাই তাতে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এটাই আমাকে আনন্দ দেয় যে, এখনও কাজ করার সুযোগ আছে। এখন অনেকেই ভাবে আমাকে দিয়ে বড় পরিসরে কাজ করাবে। এগুলো আমাকে প্রাণিত করে, উজ্জীবিত করে। যে কারণে যেকোনো সেটে গিয়ে পরিচালক ও সহশিল্পীদের সঙ্গে অনেক কথা বলে পরিস্থিতিকে যুক্তিযুক্তভাবে স্বাভাবিক আবেগ দেওয়ার চেষ্টা করি। হয়তো সেজন্য অনেকে আমাকে নিয়ে কাজ করার কথা ভাবে।
সিনেমাওয়ালা নিউজ:এখন কী কী কাজ নিয়ে ব্যস্ত?
তারিক আনাম খান: হইচই-এর একটি কাজ তো হাতে আছেই এবং ওটিটির আরও বেশ কয়েকটি কাজ নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমি সিনেমায় বেশি আগ্রহী। কারণ আমি মনে করি, সিনেমায় সত্যিকারভাবে নিজেকে দেখানো যায়। একটা জায়গা থেকে শুরু হয়ে একটা জায়গায় শেষ হয়। ফলে চরিত্রের পরিভ্রমণটা বুঝতে পারি। সিনেমা আমার কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। এতে আবিষ্কার করার সুযোগ থাকে বেশি। শারীরিকভাবে বহনের একটা ব্যাপার থাকে।
মঞ্চনাটক বা সিনেমাকে আমি নিজের মনে করি। এই দুটি শাখায় কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য পাই। বড় পর্দার ক্ষেত্রে মাথায় থাকে যে কতো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কাজটা করা যায়। সুতরাং সিনেমা আমাকে বিশেষভাবে টানে। বেশ কয়েকটি সিনেমায় কাজ করছি। অনেক সিনেমা তৈরি হয়েও আছে। এখন পর্যন্ত একটু ভিন্নধারার সিনেমাগুলো করছি। তার মানে এই নয় যে সেসবের মধ্যে বাণিজ্যিক উপাদান নেই। একেবারে গতানুগতিক বাণিজ্যিক ও পুরনো ধাঁচের কাজকে বর্জন করি। তবে আধুনিক চিন্তা-চেতনা এবং বাণিজ্যের মিশেলে কাজ করার খুব ইচ্ছে আছে। আর টেলিভিশন নাটক, ইউটিউবের জন্য কনটেন্ট, বিজ্ঞাপনেও কাজ করছি। সবচেয়ে বড় বিষয় আমার হাতে কাজ আছে।
সিনেমাওয়ালা নিউজ:প্রায় এক যুগ পর ‘গুলশান এভিনিউ’ ধারাবাহিকের দ্বিতীয় সিজন এনেছেন। আপনি এর নির্বাহী প্রযোজক। একসময় নিয়মিত বিজ্ঞাপন নির্মাণ করতেন। সিনেমা বা নাটক পরিচালনা করেননি কেনো?
তারিক আনাম খান: প্রথম কথা হলো, আমি বিজ্ঞাপন নির্মাণে বেশি যুক্ত ছিলাম। সত্যি বলতে, আমাদের মিডিয়ায় ভালো কাজ করার জন্য যত বাজেট প্রয়োজন ততটা খুব একটা মেলে না। আমি মনে করি, একজন পরিচালকের পরিশ্রম অভিনয়শিল্পীদের চেয়ে অনেক বেশি। অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে হয় তাদের। শুটিংয়ের অনেক আগে থেকে পরিচালকের কাজ শুরু হয়। তারা সময়ের দাম কতটুকু পায় তা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। এজন্য এখন পরিচালকরা ওটিটি ও ইউটিউবসহ অন্য কোন ফর্ম্যাটে কাজ করা যায় সেসব ভাবছেন। কেউ সিনেমা পেতে চেষ্টা করছেন। এটি তখন সফল হবে যখন একজন লোককে ওই পেশার মধ্যে নির্দিষ্ট করে ফেলতে পারবো। তাকে যদি বেঁচে থাকার জন্য যেসব নূন্যতম দরকার সেগুলো দিতে না পারি তাহলে তো লাভ নেই। সেই কারণে হয়তো পরিচালনা থেকে ধীরে ধীরে পিছিয়ে এসেছি। মঞ্চের কাজ করতে গিয়ে যতটা রোমাঞ্চ অনুভব করি, ততটা উত্তেজনা এখনও টেলিভিশন মিডিয়ায় কাজ করে পাইনি। হয়তো সিনেমায় পাবো। আর বিজ্ঞাপনে অন্যরকম একটা মজা আছে। যেমন ৩০-৪০ সেকেন্ডের মধ্যে একটা গল্প বলা। মূলত বিজ্ঞাপনের কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ততা ছিলো বলেই পরিচালনায় আসা হয়নি। এখন তো পরিচালকদের মূল্যায়ন খুব কম হয়।
সিনেমাওয়ালা নিউজ:ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে কি সিনেমা হলের বিকল্প মনে করেন?
তারিক আনাম খান: আদৌ না। আমার কাছে মনে হয়, সিনেমা হল এবং ওটিটি দুটি ভিন্ন বিষয়। ওটিটি বাড়িতে দেখা মানে এটি আমার নিজস্ব পছন্দ। কিন্তু সিনেমা হলের ক্ষেত্রে আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে দেখতে হয়। এই যে একসঙ্গে ২০০-৩০০ লোক সিনেমা দেখতে বসা, সিনেমা হলের লাইট বন্ধ হওয়া, সাউন্ট সিস্টেম; এখনও পর্যন্ত তুলনা করার মতো না। টেলিভিশনে যদি হাই-ফাই সাউন্ডও থাকে, তবুও সিনেমা হলের সঙ্গে মেলাতে পারি না। সিনেমা হলের আরও অনেক ব্যাপার আছে। যেমন- সিনেমা হলে সবাই একসঙ্গে হাসতে থাকা, শ্বাস ফেলা ইত্যাদি। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখনো পর্যন্ত বাসায় বসে দেখার মধ্যে সীমিত। এজন্য ওটিটি আমার একটা পছন্দ। আর সিনেমা হলে কিন্তু অনেক জেনে বুঝে যাই।
সিনেমাওয়ালা নিউজ:আপনার নাট্যদল নাট্যকেন্দ্রে কাজ করে তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিম তারকা হয়েছেন। এটা ভাবলে কেমন লাগে?
তারিক আনাম খান: অনুভূতি অবশ্যই ভালো। যখন মোশাররফ করিম বলে আমার কাছ থেকে শিখেছে, আমি তার গুরু, তখন দারুণ অনুভূতি জাগে মনে। অভিনয় কিংবা নাচ-গান শেখার জন্য কিন্তু গুরু লাগে। কারও না কারও কাছ থেকে শিখতে হয়। আমি নিজেও শিখেছি। কারও কাছ থেকে ‘ক’ শিখেছি, তারপর ‘ক’ দিয়ে কাক লেখা শিখেছি। কারখানা লেখা শিখেছি। বড় হয়েছি ধীরে ধীরে। আমি মনে করি, তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান ও মোশাররফ করিমের যোগ্যতা না থাকলে তারা পারতেন না। কম মানুষকে তো আর শেখাইনি। তৌকীর, জাহিদ ও মোশাররফ অনেকদিন ধরে টিকে থেকে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের জেদ ছিলো কাজ করে যাবে। অনেকের হয়তো মাঝপথে গিয়ে ছেদ পড়েছে, ফলে অন্য পেশায় চলে গেছে। শেখার পর নিজেকে এগিয়ে নিতে প্রক্রিয়া লাগে। আমার কাজ ছিলো অভিনয়ের বেসিকটা শিখিয়ে দেওয়া। টেকনিক, বলার স্বর ও বডি লাইনিং কী হবে, কোন এক্সপ্রেশনে কী হয়; এসব বুঝিয়েছি। ভয়েস থেকে কী উৎপন্ন করতে হবে তা জানতে একজন অভিনয়শিল্পীকে নিজের এবং নিজের শরীরকে জানা থাকা চাই। সেগুলো নাট্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের শিখিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। তারপর হয়তো তারা সেসব গ্রহণ করে নিজেদের মতো করে এগিয়েছে। সুতরাং এটাই প্রক্রিয়া।
কোনো সেটে গেলে অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তারা কীভাবে নিজেদের অতিক্রম করে আরও বড় জায়গায় যেতে পারে সেজন্য যতটা সম্ভব উদ্বুদ্ধ করি। প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীকে একসময় নিজেকে অতিক্রম করতে হয়। সে যদি নিজে থেকে না এগিয়ে যায়, তাহলে শত চেষ্টা করেও তাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে নেওয়া যায় না। নিজের বোধ ও মেধা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে এবং তাকে প্রতিটি দিনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি দেখেছি, এমন অনেক অভিনয়শিল্পী কোনো প্রস্তুতি না নিয়ে স্ক্রিপ্ট কিংবা চরিত্র না জেনে সেটের মধ্যে ঢুকে যায়। অনেকে আছে সবসময় একই রকম মেকআপ নিচ্ছে। যে মেয়েটি সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় কাজ করে তার চেহারা তো তামাটে হয়ে যাবে। সে তো আর ফর্সা থাকতে পারে না। এসব প্রস্তুতি বেশিরভাগের থাকে না। তারা না এগোতে পারলে আমি নিজেও ভালো কাজ করতে পারবো না। সেজন্য তাদের অনুপ্রাণিত রাখার চেষ্টা করি। অভিনয়ের সহজ বিজ্ঞান হলো, এটি কখনও একা করা যায় না। অ্যাক্টিং ইজ অলওয়েজ রিঅ্যাক্টিং।
সিনেমাওয়ালা নিউজ:আপনাদের সময় তো অনেক অর্থনৈতিক কষ্ট ছিল। তবুও মহড়া করেছেন। মঞ্চনাটকে আশি ও নব্বইয়ের দশকটা দারুণ ছিল। এখন মঞ্চনাটকের জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই কেনো?
তারিক আনাম খান: আমরা যখন মঞ্চনাটক শুরু করেছিলাম সেই সময়ের সঙ্গে এখনকার অনেক পার্থক্য। ১৯৭৩ সালে যদি মঞ্চনাটক শুরু হয়ে থাকে তাহলে প্রায় ৫০ বছর হতে চললো। গত ৫০ বছরে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট ও মানুষজন অনেক পাল্টেছে। আগে বেইলি রোডে রিকশা দিয়ে খুব সহজে যাওয়া যেতো বা বাস থেকে নেমে হেঁটে যাওয়া যেতো। কিন্তু এখন সেটি খুব মুশকিল। তখন টেলিভিশিন মিডিয়া ছিলো একটা। এখন টেলিভিশনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কাজও বেড়ে গেছে। অনেক অভিনয়শিল্পী মঞ্চের গণ্ডি পেরিয়ে টেলিভিশনে কাজ করছে। যেহেতু এর সঙ্গে অর্থনীতি ব্যাপারটি জড়িয়ে পড়েছে। টেলিভিশনে কাজ করলে টাকা আসে। মঞ্চনাটকের জন্য অনেক সময় দিতে হয়, মহড়া করতে হয়, বারবার যেতে হয়, কমিটমেন্ট থাকে। আমার দৃষ্টিতে মঞ্চের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, এটি শিল্পীদের সূতিকাগার। মঞ্চ থেকে শেখার অনেক কিছু থাকে। মঞ্চনাটকে একজন অভিনেতা নিজেকে প্রতিদিন নতুনভাবে আবিষ্কার করে। নতুনভাবে চ্যালেঞ্জ বা ঝুঁকি নেয়। টেভিলিশন বা সিনেমা একেবারে আলাদা। এসব জায়গায় নিখুঁতভাবে কাজ করতে হয়। মহড়া করে হোক বা যেভাবে হোক জায়গাটা তৈরি করতে হয়। নির্দিষ্ট জায়গায় চোখ বন্ধ হবে তো বন্ধ হতেই হবে, পজ দিতে হলে পজ লাগবেই। এসব কারণে সিনেমা বা টেলিভিশন অভিনয়শিল্পীরা অনেক বেশি পরিণত। আমি মনে করি, আমাদের মিডিয়া তৈরির ঘর অনেক বেশি বড় হয়ে গেছে। ফলে পরিচালক, অভিনয়শিল্পী, নাট্যকারদের কোথাও একটা ঘাটতি আছে। কেউ যখন নাটক বানাতে যায় তার অভিনেতা-অভিনেত্রী দরকার ঠিক আছে, কিন্তু সর্বনিম্নটুকু দিতে পারলেই যেন হলো, সর্বোচ্চটায় কেউ যেতে পারছে না। এর কারণ আমাদের এখানে ইনস্টিটিউশন নেই। পাশের দেশ ভারতে ঠিকই আছে। তারা কিন্তু ভারতের ইন্ডাস্ট্রিকে অনেকাংশে যোগ্য করে তুলেছে। আমাদের সময়ে হুমায়ুন ফরীদি ও রাইসুল ইসলাম আসাদ আমার প্রতিযোগী ছিল, কিন্তু সেটা সুস্থ গতিতে। ওদের নাটক দেখতাম এবং নিজেকে বলতাম- আমাকে ভালো করতে হবে।
এখন আমাদের নিজেদের কনটেন্টই তো নিজেরা দেখতে পারি না কিংবা দেখা হয় না। টেলিভিশন চ্যানেলের অনেক দায়িত্ব ছিলো, কিন্তু সম্মানের সঙ্গে বলতে চাই, আমার দৃষ্টিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। বাণিজ্যকে মাথায় নিতেই হবে। কিন্তু পাশাপাশি শিল্প ও বাণিজ্যের সম্মিলনটা দরকার। বর্তমান সময়ে মানুষ কী চায় সেজন্য তৈরি থাকা প্রয়োজন। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এসব চূড়ান্তভাবে আমরা মিস করেছি বলে আমার মনে হয়। মঞ্চনাটকে সেই অর্থে এখন আমার নিজের জন্য সময় দেওয়া মুশকিল। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে বড় পর্দা এবং ওটিটিতে কাজ করবো। আমি কি মঞ্চে সময় দিতে পারবো? সেই সময় অনেকের ক্ষেত্রে সীমিত বলে মনে করি। আমার মনে হয়, মঞ্চনাটক এখন বাঁচতে পারে যদি আমরা এটি পেশাদারিত্বের সঙ্গে গ্রহণ করি। কেউ শো করলে উপার্জন হতে হবে। ছোট করে হলেও শুরুটা কিন্তু করতে হবে। দেখবেন আগামী ১০ বছরের মধ্যে চিত্রটা বদলে যাবে। বিভিন্ন ভেন্যু তৈরি করতে হবে। শুধু শিল্পকলা একাডেমির ওপর নির্ভর করলে হবে না। গুলশানে দুটি, বনানীতে একটি, ধানমন্ডিতে দুটি এবং উত্তরায় মঞ্চ দরকার। স্থানীয়রাই মঞ্চনাটক দেখতে যাবে। উত্তরার লোকজন তো শিল্পকলায় গিয়ে সময় কাটাবে না।
সিনেমাওয়ালা নিউজ:রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। এর আগেও তো শিক্ষকতা করেছেন…
তারিক আনাম খান: রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস এখনও শুরু হয়নি। আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়েছি। জাবি’তে সেলিম আল দ্বীন স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সাভারে গিয়ে ক্লাস নেওয়াটা সহজ ব্যাপার ছিলো না। নিজের পেশাগত ব্যস্ততারও বিষয় ছিলো। সেখানে এক-দুই বছর ছিলাম। পরে এক্সটার্নাল হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু পার্টটাইম শিক্ষকের চেয়ে নিয়মিত শিক্ষক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সৃজনকলায় বিশেষ করে অভিনয়, নাচ, গানের ক্ষেত্রে একক জনের একেক ধরনের ভোকাল কোয়ালিটি, উচ্চতা ও দৃষ্টি থাকে। কিন্তু আলাদা অ্যাপ্রোচ করতে হয়। সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আছেন তারা আমাকে নিয়েছেন। হয়তো নিয়মিত ক্লাস নিতে পারবো না। তবে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো যদি ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো কাজে লাগে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে পরে অন্য চাকরি করলে ঠিক আছে। কিন্তু চাকরি করার মানসিকতা থাকলে অভিনয় করাটা খুব কঠিন। তাই একটু ঝুঁকি নিতে হবে। হয়তো ব্যর্থও হতে পারে তারা। সেটি মেনে নিতে হবে।
সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয় কারা পড়বে জানি না, তবে আমার আরেকটি ইচ্ছে অ্যাক্টিং ইনস্টিটিউট করা। ছয় মাসের একটি কোর্স রেখে নতুন একটি ব্যাচ মিডিয়ায় পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তবে গতানুগতিক মঞ্চনাটকের জন্য নয়; সিনেমা, টেলিভিশন এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে মাথায় রেখে। বিদেশ থেকেও বিশেষজ্ঞ নিয়ে কাজ করবো বলে আশা আমার। এ বিষয়ে কয়েকজনের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। আমরা সহযোগিতাও পাবো। তাই আপাতত একটি বড় জায়গা খুঁজছি, যেখানে এমন একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা যায়। কারণ আমি মনে করি, দেশ আমাকে অনেক দিয়েছে, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।
আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। ১৯৭১ সালে নয় মাস আমরা নিজেরাই নাটক লিখে ক্যাম্পে ক্যাম্পে অভিনয় করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছি। তখন অদ্ভূত সময় ছিলো। নাটকে যখন পাকিস্তানির চরিত্রে অভিনয় করতাম এবং আমাকে মুক্তিবাহিনী ধরতো তখন জয় বাংলা স্লোগান মুখে আনার জন্য কাউকে বলতে হতো না। সব মুক্তিযোদ্ধা হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে জয় বাংলা বলতো। এভাবে অভিজ্ঞতা নিয়েই কিন্তু থিয়েটার হয়। আমার মনে হয়, আমি অনেক পেয়েছি। যতোটুকু ভালোবাসা ও সামাজিক অবস্থান পেয়েছি, বাংলাদেশ না হলে সেসব কতটুকু পেতাম তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। সুতরাং সৃষ্টিকর্তা মহান। তাই আমার মনে হয়, দেশকে দেওয়ার জন্য আমার অনেক কিছু আছে। এটি আমার দায়িত্ব।
-
ছবি ও কথা1 year ago
তাসনিয়া ফারিণের বিয়ের কিছু ছবি
-
বলিউড2 years ago
‘ব্রহ্মাস্ত্র’ নিয়ে ক্যাটরিনার মধুর প্রতিশোধ!
-
নাটক2 years ago
আমেরিকায় ফুরফুরে মেজাজে মেহজাবীন-তানজিন তিশা-ফারিণ
-
ওয়ার্ল্ড সিনেমা1 year ago
বুসানে ফারুকী-তিশার সিনেমা দেখতে দর্শকদের ভিড়
-
ঢালিউড1 year ago
রাষ্ট্রপতি সিনেমাহলে সপরিবারে ‘প্রিয়তমা’ দেখলেন
-
ওয়ার্ল্ড সিনেমা1 year ago
‘জেলার’ হিট হওয়ায় ১০০ কোটি রুপি ও বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার পেলেন রজনীকান্ত
-
ঢালিউড2 years ago
শাকিবের ‘প্রিয়তমা’ কলকাতার এই নায়িকা
-
ঢালিউড2 years ago
‘বিউটি সার্কাস’: এমন চরিত্রে আর অভিনয় করবো না: ফেরদৌস