Connect with us

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

কানে সিনেমা দেখানোর দিনেই উপন্যাসটির লেখকের মৃত্যু

সিনেমাওয়ালা ডেস্ক

Published

on

(বাঁ থেকে) প্রযোজক জেমস উইলসন, জান্ড্রা হুলার, জনাথন গ্লেজার, ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডেল ও প্রযোজক এভা পুশসিনস্কা (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৭৬তম আসরে মূল প্রতিযোগিতা শাখায় থাকা ‘দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট’ তৈরি হয়েছে ২০১৪ সালে প্রকাশিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে। এর ব্রিটিশ লেখক মার্টিন অ্যামিস মারা গেছেন। কান উৎসবে সিনেমাটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের ঠিক একদিন পরেই চিরবিদায় নিলেন তিনি।

বিখ্যাত ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক মার্টিন অ্যামিসের বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। তিনি খাদ্যনালীতে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নিজের বাড়িতে তার মৃত্যু হয়েছে। মার্টিনের স্ত্রী লেখক ইসাবেল ফনসেকার বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। তাদের পাঁচ সন্তান আছে।

মার্টিন অ্যামিস (১৯৪৯-২০২৩, ছবি: টুইটার)

কবি স্যার কিংসলে অ্যামিসের ছেলে মার্টিন অ্যামিস ১৯৪৯ সালে অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্নের পরই বাবার পথ অনুসরণ করেন তিনি। দ্য টাইমস অব লন্ডন এবং দ্য নিউ স্টেটসম্যান পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার অভিজ্ঞতা ছিলো তার।

মার্টিন অ্যামিস (১৯৪৯-২০২৩, ছবি: টুইটার)

৫০ বছরের লেখক জীবনে ১৫টি উপন্যাস, কয়েকটি প্রবন্ধ এবং বাবার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে ‘এক্সপেরিয়েন্স’ নামে একটি স্মৃতিগ্রন্থ রচনা করেন মার্টিন অ্যামিস। তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য রেচেল পেপারস’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। লন্ডন নিয়ে তার বিখ্যাত ট্রিলজি উপন্যাস হলো ‘মানি: অ্যা সুইসাইড নোট’ (১৯৮৫), ‘লন্ডন ফিল্ডস’ (১৯৯০), ‘দ্য ইনফরমেশন’ (১৯৯৫)।

(বাঁ থেকে) প্রযোজক এভা পুশসিনস্কা, ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডেল, জনাথন গ্লেজার, জান্ড্রা হুলার ও প্রযোজক জেমস উইলসন (ছবি: টুইটার)

(বাঁ থেকে) প্রযোজক জেমস উইলসন, জান্ড্রা হুলার, জনাথন গ্লেজার, ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডেল ও প্রযোজক এভা পুশসিনস্কা (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

একটি রহস্যজনক খুন নিয়ে লেখা মার্টিন অ্যামিসের ‘নাইট ট্রেন’ উপন্যাস অবলম্বনে ২০১৮ সালে মুক্তি পায় ‘আউট অব ব্লু’ নামের একটি সিনেমা। এবার তৈরি হলো ‘দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট’। এর গল্প একজন উচ্চপদস্থ এসএস অফিসারের পরিবারকে কেন্দ্র করে, যারা পোল্যান্ডের আউশউইৎস বন্দিশিবিরের পাশেই স্বপ্নের বসতি গড়েছে। সেখানে ১১ লাখের বেশি মানুষকে হত্যা করেছিল নাৎসিরা। বন্দিদের ক্রমাগত চিৎকার, বন্দুকের গুলি এবং গ্যাস চেম্বার থেকে ছড়ানো ধোঁয়া তাদের তাড়া করে।

(বাঁ থেকে) প্রযোজক জেমস উইলসন, জান্ড্রা হুলার, জনাথন গ্লেজার, ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডেল ও প্রযোজক এভা পুশসিনস্কা (ছবি: টুইটার)

গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের সামনে ‘দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট’ সিনেমার কলাকুশলীরা (ছবি: টুইটার)

ব্রিটিশ পরিচালক জনাথন গ্লেজারের পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট’ সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। স্বর্ণপামের দৌড়ে এটি সামনের কাতারে রয়েছে বলে মনে করেন তারা। গত ১৯ মে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের দ্যুবুসি থিয়েটারে সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে, গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে সন্ধ্যা ৭টায় এবং বাজিন থিয়েটারে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে এর প্রদর্শনী হয়। গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে এর কলাকুশলীদের প্রতি টানা ছয় মিনিট দাঁড়িয়ে করতালিতে অভিবাদন জানান অতিথি দর্শকরা।

(বাঁ থেকে) প্রযোজক জেমস উইলসন, জান্ড্রা হুলার, জনাথন গ্লেজার, ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডেল ও প্রযোজক এভা পুশসিনস্কা (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

২০ মে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে, সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে সিনিয়াম আইম্যাক্সে, সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে লিকর্ন থিয়েটারে এবং রাত ৯টায় আনিয়েস ভারদা থিয়েটারে আবার দেখানো হয় ‘দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট’। এদিন দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন সিনেমাটির কলাকুশলীরা। ২১ মে বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে সিনিয়াম অরোরে ছিলো এর আরেকটি প্রদর্শনী।

জান্ড্রা হুলার (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

জান্ড্রা হুলার ও ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডেল (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

সিনেমাটিতে কমান্ড্যান্ট রুডলফ হোস চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডেল। গত ২০ মে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘নিজেকে আউশউইৎজ বন্দিশিবিরের কমান্ড্যান্ট হিসেবে দেখা ছিলো ভীতিকর! এ কারণে সিনেমাটি দেখে খুব অস্বস্তি লেগেছে।’

জান্ড্রা হুলার (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

সিনেমাটির পুরো শুটিং হয়েছে আউশউইৎসে। রুডলফ হোসের স্ত্রী হেদবিৎসের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জার্মান অভিনেত্রী জান্ড্রা হুলার।

জান্ড্রা হুলার ও জনাথন গ্লেজার (ছবি: টুইটার)

জনাথন গ্লেজার (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

‘দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট’ জনাথন গ্লেজারের চতুর্থ পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা। এবারই প্রথম স্বর্ণপামের লড়াইয়ে স্থান পেলো ৫৮ বছর বয়সী এই নির্মাতার সিনেমা। ২০০০ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমা ‘বার্থ’। ২০০৪ সালে ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে স্থান পায় ‘বার্থ’। সর্বশেষ ২০১৩ সালে ‘আন্ডার দ্য স্কিন’ সিনেমার প্রিমিয়ার হয়েছে টেলুরাইড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে।

স্টিভ ম্যাককুইন (ছবি: টুইটার)

কানে নাৎসিদের সত্যি গল্প
আরেক ব্রিটিশ নির্মাতা স্টিভ ম্যাককুইন এবারের কান উৎসবে নিয়ে এসেছেন নিজের পরিচালিত নতুন প্রামাণ্যচিত্র ‘অকিউপাইড সিটি’। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের দখলে থাকা নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এতে। এর দৈর্ঘ্য সাড়ে চার ঘণ্টা।

স্টিভ ম্যাককুইন (ছবি: টুইটার)

গত ১৭ মে সকাল ১০টায় দ্যুবুসি থিয়েটারে, ১৮ মে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বুনুয়েল থিয়েটারে এবং ১৯ মে সকাল ১০টায় সিনিয়াম স্ক্রিন এক্স থিয়েটারে স্পেশাল স্ক্রিনিং শাখায় ‘অকিউপাইড সিটি’র প্রদর্শনী হয়। সমালোচকরা এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাদের এটি একটি স্মারক হিসেবে দেখছেন। মর্মস্পর্শী প্রামাণ্যচিত্রটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহ নিয়ে নির্মিত সেরা সিনেমার কাতারে রেখেছেন তারা।

স্টিভ ম্যাককুইন ও বিয়াঙ্কা স্টিখটার (ছবি: টুইটার)

স্টিভ ম্যাককুইনের ডাচ স্ত্রী বিয়াঙ্কা স্টিখটারের লেখা ‘অ্যাটলাস অব অ্যান অকিউপাইড সিটি-আমস্টারডাম ১৯৪০-১৯৪৫’ গ্রন্থ অবলম্বনে করোনাকালে প্রামাণ্যচিত্রটির শুটিং হয়। নাৎসিদের ভয়াবহতা বুঝতে আমস্টারডামের শতাধিক স্থানে ঘুরেছেন তিনি।

স্টিভ ম্যাককুইন, বিয়াঙ্কা স্টিখটার, প্রযোজক ফ্লোর অনরাস্ট ও আনা স্মিথ-টেনসার (ছবি: টুইটার)

স্টিভ ম্যাককুইন ২০১৪ সালে ‘টুয়েলভ ইয়ারস অ্যা স্লেভ’ সিনেমার সুবাদে অস্কার জেতেন। তার মতে, ইউক্রেনের যুদ্ধ কিংবা উগ্র ডানপন্থীদের উত্থান বুঝতে অতীতের দিকে তাকানো গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তিনি বলেন, ‘আমরা কীভাবে আজ এখানে পৌঁছেছি, সেই বিষয়ের সঙ্গে এই প্রামাণ্যচিত্রটি প্রাসঙ্গিক।’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে নিজের আগামী সিনেমা ‘ব্লিৎজ’ পরিচালনা করেছেন স্টিভ ম্যাককুইন। এতে প্রধান চরিত্রে থাকছেন আইরিশ-আমেরিকান অভিনেত্রী সার্শা রোনান।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ