Connect with us

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের এসব তথ্য কতটা জানেন

সিনেমাওয়ালা ডেস্ক

Published

on

পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবন (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

বিশ্ব সিনেমার বৃহৎ শোকেস হিসেবে সমাদৃত কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের লালগালিচা সাজানো হয়ে গেছে। ভূমধ্যসাগরের তীরে জমকালো এই আয়োজনে জৌলুস ছড়াবেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, নাটালি পোর্টম্যান ও হ্যারিসন ফোর্ডের মতো হলিউড তারকারা।

৭৬তম কানে থাকছে সিনেমার প্রদর্শনী, সংবাদ সম্মেলন এবং ঝলমলে পার্টি। জেনে নিন কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নিয়ে কিছু তথ্য এবং এবারের আসরে স্বর্ণপামের লড়াইয়ে থাকছে যেসব সিনেমা।

পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবন (ছবি: সিনেমাওয়ালা নিউজ)

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কী, কেন এটি উদযাপন করা হয়?
সিনেমা নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎসব কান। তৎকালীন ফ্যাসিবাদী-প্রভাবিত ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বিকল্প হিসেবে ১৯৩৯ সালে প্রথমবার এর আয়োজন করা হয়। ১৯৩৯ সালের ১ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘোষণার কারণে এটি বাতিল হয়।

১৯৪৬ সাল থেকে প্রতিবছর কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। যুদ্ধ শেষের পর প্রথম আসর হয়েছিলো সাগরপাড়ের শহরটির আগেকার পৌর ক্যাসিনোতে। ১৯৪৯ সাল থেকে বর্তমান জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেলে থাকা পালে ক্রজেট ৩৩ বছর উৎসবটির ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার হয়। ১৯৪৮ ও ১৯৫০ সালে অর্থের অভাবে বাতিল হয় কান। ১৯৬৮ সালে ফ্রান্স জুড়ে ছাত্রদের বিক্ষোভের কারণে বাতিল হয়ে যায় কান।

বিভিন্ন আয়োজন অনেক যত্নের সঙ্গে সাজানোর জন্য উৎসবটি দুনিয়াজোড়া গ্রহণযোগ্য। কানে নির্বাচিত সিনেমা অস্কারে গুরুত্ব পায়। এছাড়া কোয়েন্টিন টারান্টিনোর মতো বিখ্যাত পরিচালকদের ক্যারিয়ার গড়ে দিতে কানের ভূমিকা অপরিসীম। পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিল্ম মার্কেট মার্শে দ্যু ফিল্মে প্রতিবছর অংশ নিয়ে থাকেন সাড়ে ১২ হাজারের বেশি ফিল্ম প্রফেশনাল।

কান কোথায় হয়?
বরাবরের মতো ফ্রান্সের দক্ষিণে উপকূলীয় শহর কানে হতে চলেছে উৎসবটি। পর্যটন শহরটির পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবন এর প্রাণকেন্দ্র। এতে অংশ নিতে পারেন কেবল আমন্ত্রিতরা। ১৯৮৩ সাল থেকে এখানেই কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অফিসিয়াল সিলেকশনের আয়োজন থাকে। ২০১০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ভবনটির সব দেয়াল পুনরায় রাঙাতে চার হাজার লিটার সাদা রঙ লেগেছিলো। এতে রয়েছে ২ হাজার ৩০০ আসনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়ের।

‘জান দ্যু ব্যারি’ সিনেমার দৃশ্যে মাই ওয়েন ও জনি ডেপ (ছবি: হোয়াই নট প্রোডাকশন্স)

৭৬তম কানের সময়সূচি
আজ (১৬ মে) পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনে শুরু হতে যাচ্ছে উৎসবটির ৭৬তম আসর। এবারের উদ্বোধনী সিনেমা ফরাসি ভাষায় নির্মিত ‘জান দ্যু ব্যারি’। এর মাধ্যমে রুপালি পর্দায় প্রত্যাবর্তন করছেন হলিউড সুপারস্টার জনি ডেপ। তার বিপরীতে আছেন মাই ওয়েন। তিনিই এটি পরিচালনা করেছেন।

১২ দিনব্যাপী উৎসবের পর্দা নামবে আগামী ২৭ মে। সমাপনী আয়োজনে দেখানো হবে পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওর ২৭তম সিনেমা ‘এলেমেন্টাল’। উদ্বোধনী ও সমাপনী সিনেমা দুটি রয়েছে অফিসিয়াল সিলেকশনের প্রতিযোগিতার বাইরে।

‘মে ডিসেম্বর’ সিনেমার দৃশ্যে নাটালি পোর্টম্যান ও জুলিয়ান মুর (ছবি: কিলার ফিল্মস)

মূল প্রতিযোগিতার জন্য কোন সিনেমাগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে?
কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে রয়েছে বিভিন্ন শাখা। এরমধ্যে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত হলো প্রতিযোগিতা। এতে নির্বাচিত সিনেমাগুলো স্বর্ণপামের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এবারের আসরে এই দৌড়ে রয়েছে ২১টি সিনেমা। এগুলো হলো–

* ক্লাব জিরো
পরিচালনা: জেসিকা হাউজনার (অস্ট্রিয়া)

* দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট
পরিচালনা: জনাথন গ্লেজার (যুক্তরাজ্য)

* ফলেন লিভস
পরিচালনা: আকি কাউরিসমাকি (ফিনল্যান্ড)

* ফোর ডটারস
পরিচালনা: কাউতার বেন হানিয়া (তিউনিসিয়া)

* অ্যাস্টেরয়েড সিটি
পরিচালনা: ওয়েস অ্যান্ডারসন (যুক্তরাষ্ট্র)

* অ্যানাটমি অব অ্যা ফল
পরিচালনা: জাস্টিন ত্রিয়েত (ফ্রান্স)

* মনস্টার
পরিচালনা: কোরি-এদা হিরোকাজু (জাপান)

* অ্যা ব্রাইটার টুমরো
পরিচালনা: নান্নি মোরেত্তি (ইতালি)

* লাস্ট সামার
পরিচালনা: ক্যাথেরিন ব্রেইয়াত (ফ্রান্স)

* অ্যাবাউট ড্রাই গ্রাসেস
পরিচালনা: নুরি বিলগে জেলান (তুরস্ক)

* লা কিমেরা
পরিচালনা: আলিস রোরওয়াকার (ইতালি)

* দ্য পত-অঁ-ফু
পরিচালনা: ট্র্যান আন হাং (ভিয়েতনাম/ফ্রান্স)

* কিডন্যাপড
পরিচালনা: মার্কো বেলোকিও (ইতালি)

* মে ডিসেম্বর
পরিচালনা: টড হেইন্স (যুক্তরাষ্ট্র)

* ইয়ুথ (স্প্রিং) প্রামাণ্যচিত্র
পরিচালনা: ওয়াং বিং (চীন)

* দ্য ওল্ড ওক
পরিচালনা: কেন লোচ (যুক্তরাজ্য)

* ব্যানেল অ্যান্ড অ্যাদামা
পরিচালনা: রামাতা তুলাই সি (প্রথম সিনেমা, সেনেগাল/ফ্রান্স)

* পারফেক্ট ডেজ
পরিচালনা: ভিম ভেন্ডার্স (জার্মানি)

* ফায়ারব্র্যান্ড
পরিচালনা: কারি আইনুজ (ব্রাজিল)

* ব্ল্যাক ফাইলস
পরিচালনা: জ্যঁ-স্টেফান সোভেয়ার

* হোমকামিং
পরিচালনা: ক্যাথরিন কোরসিনি (ইতালি)

প্রতিযোগিতার বাইরে হলিউডের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন তারকার নতুন সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে কানে। এগুলো হলো মার্টিন স্করসেসির ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ (লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও), ‘ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড দ্য ডায়াল অব ডেস্টিনি’ (হ্যারিসন ফোর্ড)। এছাড়া শর্ট ফিল্ম এবং আর্ট-হাউস সিনেমাকেন্দ্রিক শাখা আঁ সাঁর্তা রিগা শাখা রয়েছে।

স্বর্ণপাম পুরস্কার (ছবি: টুইটার)

কানের পুরস্কার কী, কারা জিতেছেন?
কানের সর্বোচ্চ পুরস্কার হলো স্বর্ণপাম। অতীতে এটি জিতে নেওয়া সিনেমার তালিকায় উল্লেখযোগ্য– ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’, ‘অ্যাপোক্যালিপস নাউ’, ‘পাল্প ফিকশন’, ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ এবং ‘প্যারাসাইট’। ইতিহাসে মাত্র দুই নারী স্বর্ণপাম জিতেছেন। তারা হলেন নিউজিল্যান্ডের জেন ক্যাম্পিয়ন (দ্য পিয়ানিস্ট) ও ফ্রান্সের জুলিয়া দুকুরনো (তিতান)। গত বছর এটি জিতেছে সুইডেনের ‘ট্রায়াঙ্গেল অব স্যাডনেস’। এর পরিচালক রুবেন অস্টলান্ড এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা শাখার প্রধান বিচারক। সর্বশেষ ৫০ বছর আগে সুইডেন থেকে প্রধান বিচারক ছিলেন অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যান।

কানের অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে গ্রাঁ প্রিঁ, জুরি প্রাইজ, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা অভিনেত্রী, সেরা চিত্রনাট্য ও সেরা শর্টফিল্ম।

৭৬তম কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অফিসিয়াল পোস্টার

অফিসিয়াল পোস্টার কেমন এবং সঞ্চালক কে?
৭৬তম কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অফিসিয়াল পোস্টারে স্থান পেয়েছেন বর্ষীয়ান ফরাসি অভিনেত্রী ক্যাথরিন দ্যুনোভ। ১৯৬৮ সালে ‘লা শামাদ’ সিনেমার শুটিংয়ে তোলা হয় তার সাদাকালো ছবিটি। তিনি হলেন কিংবদন্তি ফিল্মমেকার মার্সেলো মাস্ত্রোইয়ান্নির স্ত্রী। তাদের মেয়ে ফরাসি অভিনেত্রী কিয়ারা মাস্ত্রোইয়ান্নি এবারের আসরের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন। ফ্রান্স টেলিভিশন এবং ব্রুট এসব আয়োজন সরাসরি দেখাবে।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ