Connect with us

ওটিটি

গভীর সুন্দরবনে চঞ্চলের শুটিংয়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

‘ফেউ’ ওয়েব সিরিজে চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: চরকি)

গভীর সুন্দরবনে নতুন একটি ওয়েব সিরিজের শুটিংয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন চঞ্চল চৌধুরী। চরকির নতুন ওয়েব সিরিজ ‘ফেউ’র জন্য ২০ দিনের বেশি সময় দিতে হয়েছে তাকে। এটি পরিচালনা করেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান। 

‘ফেউ’তে সুনীল চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। সে একজন ফটোগ্রাফার। ওয়েব সিরিজে ইতিহাসের একটি ছায়া ও প্রেক্ষাপট রয়েছে। সেসব ঘটনার অনেক তথ্য সুনীল নিজের ক্যামেরায় ধরে রাখে।

চঞ্চল চৌধুরী শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘সুন্দরবনে মাসখানেক ওয়েব সিরিজটির শুটিং হয়েছে, যার মধ্যে আমি ছিলাম ২০ দিনের বেশি।তখন প্রচণ্ড ঠান্ডা ছিলো। পুরো ইউনিটকে থাকতে হয়েছে লঞ্চে। রাতে ঘুমানোর সময় খুব ঠান্ডা লাগতো। শীতের পোশাক পরেই ঘুমাতাম। তবে ঠান্ডার চেয়েও ভয়ের বিষয় ছিলো কুমির। আমাদের লঞ্চ যেখানে নোঙর করা হয়েছে সেখানেই ছিলো কুমির। সকালে জানালা দিয়ে মুখ বের করলেই কুমিরসহ বিভিন্ন পশু-পাখি দেখা যেতো। আমরা লঞ্চ থেকে শুটিং স্পটে যেতাম ছোট ছোট ট্রলারে। রাতেও শুটিং করতে হতো। খুব কঠিন পরিস্থিতি ছিলো।’

‘ফেউ’ ওয়েব সিরিজে চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: চরকি)

গতকাল (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে চরকির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ পেয়েছে ’ফেউ’র টিজার। এতে একটি সংলাপ রয়েছে, ‘ও সুনীল দা, ফেউ কারা?’ উত্তরে শোনা যায়, ’এজেন্ট। সরকারি গোয়েন্দা-গে এজেন্ট কয়।’

‘ফেউ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘শৃগাল’। অন্যভাবে বললে এর অর্থ বাঘের পেছন থেকে ডেকে ডেকে বাঘের আগমন জানিয়ে দেয় এমন শৃগাল। অর্থাৎ চালাক প্রকৃতির কিছু বলা যায়। অনুসরণকারী হিসেবেও ফেউ-এর ব্যবহার দেখা যায়। ফেউ লাগা মানে কারও পেছনে লেগে তাকে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত বা বিরক্ত করা। চরকির ওয়েব সিরিজ ‘ফেউ’-এর নামকরণের পেছনে এসব দ্যোতনা নিহিত।

‘ফেউ’ ওয়েব সিরিজে চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: চরকি)

‘ফেউ’র নির্মাতা সুকর্ন সাহেদ ধীমান বলেন, “পুরো গল্প জুড়েই ফেউ শব্দটির উপস্থিতি আছে। গল্পের রাজনৈতিক বর্ণনাতেও ফেউ প্রাসঙ্গিক। মানুষের স্বভাবজাত আতঙ্ক ও ভয় যখন দৈনন্দিন হয়ে যায় তখনও সেটি ফেউ শব্দ দিয়ে বোঝানো সম্ভব। এই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস ও উতরে ওঠার গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে ওয়েব সিরিজটি। তাই এর নামকরণ ‘ফেউ’ সবচেয়ে যৌক্তিক মনে হয়েছে।”

‘ফেউ’র টিজারে চঞ্চল চৌধুরীরর পাশাপাশি অন্য অভিনয়শিল্পীদের নাম ও মুক্তির তারিখ জানানো হয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে (৩০ জানুয়ারি) চরকিতে মুক্তি পাবে সিরিজটি। এতে আরো অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, তানভীর অপূর্ব, হোসেন জীবন, তাহমিনা অথৈ, রিজভি রিজু, ফাদার জোয়া, বাবলু বোস, এ কে আজাদ সেতু।

‘ফেউ’ ওয়েব সিরিজে তারিক আনাম খান (ছবি: চরকি)

কাজী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। তিনি বলেন, ‘কাজী এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। রাজনীতির সঙ্গে লোকটি বেশ জড়িত। সব জায়গায় তার কর্তৃত্ব আছে, কিন্তু সে এই ক্ষমতা বুঝতে দিতে চায় না। তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে এলাকার রাজনীতি বেশ ভালোভাবে উঠে এসেছে বলে আমার মনে হয়।’

তারিক আনামা খানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনা অঞ্চলে। কিন্তু তিনি আগে কখনো সুন্দরবন দেখেননি! এবারই প্রথম সুন্দরবনের ভেতরে শুটিং করার অভিজ্ঞতা হলো তার। তিনি বলেন, “আমার নিজের এলাকা বলে ভাষার ব্যবহারে খুব আরাম লেগেছে। কিছু বিষয় কানে লেগে আছে। আমাকে দেখে অনেকে বলেছে, ‘উরে বাবারে আপনারে এতোদিন পরে দেখলাম, সেই ছোটবেলায় দিখিছি। টেলিভিশনে দেখতি যাতাম পাঁচ মাইল দূরি। উরি আল্লাহ এ কী দেখতিছি, আপনারে একটু ছুঁয়ে দিখি।’ তারা সাধারণ ভাষায় হৃদয়ের কথা বলে দিলো, এজন্য খুব ভালো লেগেছে আমার।”

‘ফেউ’ ওয়েব সিরিজে মোস্তাফিজুর নূর ইমরান (ছবি: চরকি)

মার্শাল চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। ওয়েব সিরিজটির জন্য দেড় বছর সময় নিয়েছেন তিনি। তার কথায়, ‘পরিচালক যখন এই গল্প ও মার্শাল চরিত্রটা শোনায়, তখন এতোটাই উচ্ছ্বসিত ছিলাম যে, চরিত্র অনুযায়ী প্রস্তুত হতে কতটা সময় লাগবে বা কী হবে সেসব মনেই আসেনি বা ভাবিনি। কাজটা সুন্দরবনে হয়েছে। সেখানকার একটা চরিত্রের শারীরিক ভাষা, দর্শন, আরও ডিটেইল কীভাবে করা যায় সেগুলোর প্রস্তুতি নিয়েছি। চুল-দাড়ি বড় করতে হয়েছিল। এটা তো দেখা যায় কিন্তু ভেতরে এক রকম প্রস্তুতি নিতে হয় যেটা দেখা যায় না।’

নূর ইমরান জানান, ‘ফেউ’র শুটিং অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। সুন্দরবনের এমন সব জায়গায় কাজ করতে হয়েছে, যেখানে আগে কখনো শুটিং হয়নি। সেসব জায়গা আমাদের শুটিং উপযোগী করে প্রস্তুত করতে হয়েছে।’

১৯৭৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পরগণা জেলার দ্বীপ মরিচঝাঁপিতে ঘটে যাওয়া গণহত্যার ছায়া অবলম্বনে ’ফেউ’ নির্মিত হলেও সিরিজটি ফিকশনাল। এর গল্প লিখেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান, রোমেল রহমান এবং চিত্রনাট্য করেছেন সুকর্ন সাহেদ ধীমান, সিদ্দিক আহমেদ। ইতিহাসের সঙ্গে নিজের দেখা চরিত্র, নিজের জানা ঘটনা, নিজের অঞ্চলের গল্প সিরিজে তুলে ধরেছেন বলে জানান নির্মাতা।

Advertisement

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ