Connect with us

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

টানা ৯ মিনিট দর্শকদের দাঁড়িয়ে অভিবাদন, ডিক্যাপ্রিওর কান জয়

সিনেমাওয়ালা ডেস্ক

Published

on

‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ সিনেমার কলাকুশলীদের পাশে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ৭৬তম আসরের বহুল প্রত্যাশিত সিনেমার তালিকায় মার্টিন স্করসেসি পরিচালিত ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ অন্যতম। গতকাল (২০ মে) উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে প্রতিযোগিতার বাইরে এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে। তার আগে লালগালিচায় হাজির হন সিনেমার অন্যতম তারকা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। তাকে ঘিরে সাগরপাড়ের শহরে ছড়িয়ে পড়ে উন্মাদনা। বিশেষ করে তরুণীদের উপচেপড়া ভিড় ছিলো লক্ষণীয়। তারা প্রিয় তারকাকে একনজর দেখতে ও তার ছবি-ভিডিও ধারণ করতে হইচই ফেলে দিয়েছে।

চার বছর পর আবার কানসৈকতে পা রেখেছেন হলিউড হার্টথ্রব লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। সর্বশেষ ২০১৯ সালে কানে প্রতিযোগিতার বাইরে দেখানো হয় তার অভিনীত ‘ওয়ান্স আপন অ্যা টাইম ইন হলিউড’। এর প্রচারে আরেক হলিউড তারকা ব্র্যাড পিট এবং পরিচালক কোয়েন্টিন টারান্টিনোর সঙ্গে ফরাসি উপকূলীয় শহরটিতে গিয়েছিলেন তিনি।

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ আবার কানে নিয়ে এলো লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওকে। শুধু তিনি নন, সিনেমাটি পুরোপুরি তারকায় ঠাসা। লালগালিচায় আরো ছিলেন অভিনেতা রবার্ট ডি নিরো, জেসি প্লেমন্স, অভিনেত্রী লিলি গ্ল্যাডস্টোন, অ্যাপলের সিইও টিম কুক।

দম্পতির ভূমিকায় ডিক্যাপ্রিও-লিলির অভিনয়ে দর্শকরা এতোই মুগ্ধ হয়েছেন যে, প্রদর্শনী শেষে লুমিয়ের থিয়েটারের আলো জ্বলে ওঠার পর টানা ৯ মিনিট সবাই দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে অভিবাদন জানান। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ সময়ের অভিবাদন। গতকাল স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে ১ হাজার ৬৮ আসনের দ্যুবুসি থিয়েটারে ছিল সংবাদকর্মীদের জন্য প্রদর্শনী। তারাও করতালি দিয়েছেন দীর্ঘক্ষণ।

‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ সিনেমার কলাকুশলীদের পাশে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

ওসেজ নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিলি গ্ল্যাডস্টোন, যিনি তেলের সম্পদ থাকায় স্বামীর লোভের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। প্রিমিয়ারে দর্শকরা তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তখন তার চোখে দেখা যায় আনন্দ অশ্রু। অস্কার ব্লগাররা মনে করেন, আগামী বছর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানগুলোতে মনোযোগ কাড়বেন এই নায়িকা।

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ও মার্টিন স্করসেসি (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

মার্টিন স্করসেসির সঙ্গে ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ ডিক্যাপ্রিওর ষষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা। এর আগে ‘গ্যাংস অব নিউইয়র্ক’ (২০০২), ‘দ্য এভিয়েটর’ (২০০৪), ‘দ্য ডিপার্টেড’ (২০০৬), ‘শাটার আইল্যান্ড’ (২০১০) এবং ‘দ্য উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’ (২০১৩) সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছেন তারা। এছাড়া স্করসেসির পরিচালনায় ‘দ্য অডিশন’ নামের একটি শর্টফিল্মে দেখা গেছে তাকে। এরমধ্যে ‘দ্য এভিয়েটর’ ও ‘দ্য উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট’-এর জন্য অস্কারে মনোনীত হন ডিক্যাপ্রিও।

‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ সিনেমার কলাকুশলীদের পাশে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

২০১৭ সালে প্রকাশিত আমেরিকান কথাসাহিত্যিক ডেভিড গ্রানের জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন: দ্য ওসেজ মার্ডারস অ্যান্ড দ্য বার্থ অব দ্য এফবিআই’ অবলম্বনে সাজানো হয়েছে তিন ঘণ্টা ২৬ মিনিট দৈর্ঘ্যের সিনেমাটি। এর চিত্রনাট্য লিখেছেন মার্টিন স্করসেসি ও এরিক রোথ। গল্পে দেখা যায়, ১৯২০ শতকের আমেরিকান রাজ্য ওকলাহোমায় তেল আবিষ্কারের পর রহস্যজনকভাবে একের পর এক ওসেজ উপজাতির সদস্য নৃশংসভাবে খুন হতে থাকে। নবগঠিত এফবিআই তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে যায় এবং একটি ভয়ঙ্কর অপারেশন উন্মোচন করে। সিনেমাটির বাজেট ২ হাজার ১৪০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ প্রযোজনা করেছে অ্যাপল অরিজিনাল ফিল্মস। তবে অ্যাপল টিভি প্লাসের আগে সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়া হবে এটি। সেজন্য কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো মূল প্রতিযোগিতা শাখায় সিনেমাটিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। উৎসবের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হলে যেকোনো প্রযোজক কিংবা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে তাদের সিনেমা অনলাইনের আগে ফ্রান্সের সিনেমা হলে মুক্তি দিতেই হবে। কিন্তু পরিচালক স্করসেসি স্বর্ণপামের জন্য লড়তে রাজি হননি। কানে ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ (১৯৭৬) সিনেমার সুবাদে স্বর্ণপাম জিতেছেন তিনি। এটি রবার্ট ডি নিরোর ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় কাজ। এর মাধ্যমে অস্কারে সেরা অভিনেতা শাখায় মনোনীত হন তিনি।

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

এ নিয়ে স্করসেসির পরিচালনায় দশমবার পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমায় অভিনয় করলেন রবার্ট ডি নিরো। স্করসেসির ‘কেপ ফিয়ার’ (১৯৯১) ও ‘রেজিং বুল’ (১৯৮০) সিনেমা দুটিও তাকে অস্কারের সেরা অভিনেতা শাখার মনোনয়ন এনে দিয়েছে। এরমধ্যে ‘রেজিং বুল’ সিনেমার জন্য অস্কার জিতেছেন তিনি।

রবার্ট ডি নিরো, মার্টিন স্করসেসি ও লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

৩০ বছর পর আবার একসঙ্গে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমায় অভিনয় করলেন অস্কারজয়ী দুই অভিনেতা ডিক্যাপ্রিও-ডি নিরো। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে ব্রিটিশ পরিচালক মাইকেল ক্যাটন-জোন্সের ‘দ্য বয়েজ লাইফ’ সিনেমায় দেখা গেছে তাদের। ডিক্যাপ্রিও, ডি নিরো ও স্করসেসি এবারই প্রথম একসঙ্গে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমায় কাজ করলেন।

৩৭ বছর পর আবার কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পেলো মার্টিন স্করসেসির সিনেমা। ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ দিয়ে তার কানযাত্রা শুরু হয়েছিলো। এরপর ১৯৮৬ সালে ‘আফটার আওয়ার্স’ সিনেমার সুবাদে কানে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জেতেন তিনি।

মার্টিন স্করসেসি ও রবার্ট ডি নিরো (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

১৯৯৮ সালে কানের মূল প্রতিযোগিতা শাখায় বিচারকদের প্রধান ছিলেন মার্টিন স্করসেসি। ২০০২ সালে উৎসবটির সিনেফঁদাসো ও শর্টফিল্ম শাখার বিচারকদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্ব সিনেমার ইতিহাস সুরক্ষা ও সংরক্ষণে নিবেদিত সংস্থা দ্য ফিল্ম ফাউন্ডেশন পরিচালনা করছেন এই গুণী নির্মাতা। এর অংশ হিসেবে পুনরুদ্ধার করা বেশকিছু সিনেমা কান ক্ল্যাসিকসে পরিবেশন করেছেন তিনি।

‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ সিনেমার কলাকুশলীদের পাশে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (ছবি: কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল)

প্যারামাউন্ট পিকচার্সের পরিবেশনায় ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৬ অক্টোবর বড় পর্দায় আসবে। শুরুতে সীমিতসংখ্যক কিছু সিনেমা হলে এবং ২০ অক্টোবর উত্তর আমেরিকা জুড়ে মুক্তি পাবে এই সিনেমা। ফ্রান্সের সিনেমা হলে ১৮ অক্টোবর থেকে দেখা যাবে ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’। এতে আরো অভিনয় করেছেন ব্রেন্ডন ফ্রেজার, জন লিথগো, কারা জেড মায়ার্স, জেনাই কলিন্স, জিলিয়ান ডিওন, টেন্টু কার্ডিনাল। অতিথি চরিত্রে আছেন মার্টিন স্করসেসি।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ