বিদ্যা সিনহা মিম (ছবি: ফেসবুক)

রায়হান রাফি পরিচালিত ‘পরাণ’ মুক্তির পর থেকেই প্রশংসায় ভাসছেন বিদ্যা সিনহা মিম। এতে অনন্যা চরিত্রে তিনি রীতিমতো বাজিমাত করেছেন বলে মন্তব্য অনেকের। এখন পর্যন্ত এটাই তার ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্স হিসেবে দেখছেন সাধারণ দর্শকরা। সদ্য যৌবনে পা দিলে একটি মেয়ে যেমন আচরণ করে এবং বারবার ভুল সিদ্ধান্তে জড়ায়, মিম সেসব নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার কিছু আহ্লাদীপনা সাধারণ মানুষ অনেক পছন্দ করেছে। অনন্যা চরিত্রে মিম দেখিয়েছেন, কতটা অসামান্য তিনি। রূপে নয়, এবার অভিনয়ে মন ভুলিয়েছেন মিম। ‘পরাণ’ হয়ে থাকবে তার ক্যারিয়ারের একটি টার্নিং পয়েন্ট। ‘পরাণ’ সিনেমার সাফল্য প্রসঙ্গে সিনেমাওয়ালা নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘পরাণ’ মুক্তির ২৯ দিন পরও হাউজফুল। এটি বাংলা সিনেমার জন্য নতুন মাইলফলক। এখনো মানুষ টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। এতোটা কি প্রত্যাশা ছিলো?
বিদ্যা সিনহা মিম: এতোটা প্রত্যাশা আসলেই ছিলো না। আমাদের বড়জোড় ধারণা ছিলো, সিনেমাটি ভালো যাবে। ভালো যাবে বলতে হয়তো এক-দুই সপ্তাহ। কিন্তু মুক্তির একমাস যাওয়ার পরও সিনেমা হলগুলোতে ‘পরাণ’ হাউসফুল। মানুষ এখনো টিকিট কাটতে গেলে পাচ্ছে না। এতোটা কখনোই আশা করিনি। এটি বাংলা ফিল্মের জন্য এসব অন্যরকম ব্যাপার।

বিদ্যা সিনহা মিম (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘পরাণ’ দেখতে অনেকে বহু বছর পর পরিবারসহ সিনেমা হলে এসেছে। তাদের মধ্যে নারী দর্শকের উপস্থিতি বেশি। হলিউডের সিনেমার চেয়ে ‘পরাণ’ বেশি দর্শক দেখছে। ‘পরাণ’ নিয়ে এই যে এতো মাতামাতি, ভাবলে কেমন লাগে?
মিম: ‘পরাণ’ নিয়ে একেবারে ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধসহ সবার মাতামাতি দেখে অসম্ভব ভালো লাগে। বিভিন্ন শ্রেণির সব বয়সী মানুষ এবং অনেক পরিবার সিনেমা হলে এসেছে। যতো মানুষ দেখেছি সবার একটাই কথা– পরিবার নিয়ে দেখার মতো সিনেমা এটি। এমনও হয়েছে যে, একই পরিবারের ২০-৩০ জন মিলে সিনেমাটি দেখেছে। তাদের মধ্যে ছোট বাচ্চা থেকে বয়স্করাও ছিলেন। আমার মনে হয়, অনেক বছর পর ‘পরাণ’-এর মাধ্যমে এমন আনন্দময় আবহ তৈরি হয়েছে। যারা ২০ বছরের মধ্যে সিনেমা হলে আসেনি, তারাও ‘পরাণ’ দেখেছেন। আমার জানা মতে, এমন ঘটনা প্রচুর আছে।

তিন দিন আগে এক কিশোরীর সঙ্গে দেখা করেছি, যে পাঁচবার ‘পরাণ’ দেখেছে। এসব ব্যাপার কিন্তু অন্যরকম যে, মানুষ বারবার সিনেমাটা দেখছে। ‘আমি এই সিনেমা এতোবার দেখেছি’– এটা বলা অনেকের মধ্যে একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে। ফলে সত্যি খুব ভালো লাগছে। এই যে মানুষের হলমুখী হওয়া এবং ‘পরাণ’ তাদের উচ্ছ্বাস পুরোপুরি অন্যরকম। সত্যি বলতে ‘পরাণ’কে হিট বানিয়েছেন দর্শকই। তাদের মুখে মুখে শোনা গেছে ‘ভালো লেগেছে’, তারা আরও ১০ জনকে গিয়ে বলেছে, এভাবেই কিন্তু সিনেমাটি সুপারহিট হয়েছে। আসলে সুপারহিট না, আমি বলবো ‘পরাণ’ ব্লকবাস্টার হিট।

বিদ্যা সিনহা মিম (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘পরাণ’ সিনেমার জন্য ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন সিনেমা হলে গিয়েছিলেন। পুরো অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিলো?
মিম: আমরা তো মুক্তির প্রথম দিন থেকে মোটামুটি অনেক সিনেমা হলে ঘুরেছি। ঢাকা ছাড়াও ময়মনসিংহ, গাজীপুরসহ বেশকিছু জায়গায় গিয়েছি। পুরো অভিজ্ঞতা খুব ভালো। যে সিনেমা হলেই পা রেখেছি, সেখানেই শুনেছি ‘পরাণ’ রেকর্ড গড়েছে। ঢাকার বাইরের সিনেমা হলেও একই দৃশ্য। সিনেপ্লেক্সে হিট যাচ্ছে ঠিক আছে, সিঙ্গেল স্ক্রিনে কেমন যাবে তা নিয়ে কিছুটা ভাবছিলাম। কিন্তু সিঙ্গেল স্ক্রিনেও সিনেপ্লেক্সের মতো ভালো চলছে ‘পরাণ’। প্রতিটি জায়গায় হাউসফুল। এটাকে তো আমাদের বাংলা ফিল্মের জন্য নতুন একটা যাত্রা বলাই যায়।

আমার ফেসবুক পেজে সিনেমা হলের অনেক ভিডিও শেয়ার করেছি। যেমন বরিশালের মতো জায়গায় যেখানে নারীরা অনেক বছর বাসা থেকে বেরিয়ে সিনেমা হলে যায়নি এবং যে সিনেমা হলে এতো বছর কোনও মেয়ে আসেনি, সেখানে প্রচুর মেয়ে দর্শক দেখেছি। সেগুলো খুব একটা ভালো মানের কিংবা সিনেপ্লেক্সের মতো আধুনিক সিনেমা হল না যেখানে আরাম করে বসা যায়। ঢাকার বাইরের সিনেমা হলগুলোতে গিয়ে মনে হলো, সেসব জায়গায় মানুষ খুব কষ্ট করে সিনেমা দেখে। সিনেমা দেখার প্রতি মানুষের এতোই ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা যে, সিনেমা হলে কষ্ট করেই দেখে। ‘পরাণ’কে তারা যে ভালোবাসা দিয়েছে সেজন্য তাদের স্যালুট।

বিদ্যা সিনহা মিম (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘পরাণ’ ১২ আগস্ট থেকে অস্ট্রেলিয়ায় চলবে। এরপর ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে বলে জেনেছি। বিদেশে প্রচারণার জন্য যাবেন?
মিম: ‘পরাণ’ মুক্তির পর থেকে বলতে পারেন আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের দর্শকরা আমাকে পাগল বানিয়ে দিয়েছে। সিনেমাটি তারা কবে দেখবেন সেজন্য সবাই আকুল হয়ে আছে! আপনারা জানেন, ‘পরাণ’ অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তির আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে! সবকিছু মিলিয়ে সত্যি খুব ভালো লাগছে। বাংলাদেশের দর্শক সিনেমাটি নিয়ে যতটা রোমাঞ্চিত, তার চেয়ে বেশি উত্তেজনা দেশের বাইরের মানুষের। তবে বিদেশে সিনেমার প্রচারণার জন্য যাওয়া হবে না আমার। কারণ ভিসার ব্যাপার আছে। এতো তাড়াতাড়ি তো ভিসা পাওয়া যাবে না।

বিদ্যা সিনহা মিম (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: অনন্যা চরিত্রে আপনার অভিনয় ভূয়সী প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এগুলোর মধ্যে কার প্রশংসা আলাদাভাবে সবসময় মনে থাকবে?
মিম: সবাই আমার খুব দারুণ প্রশংসা করেছেন। এজন্য ভালো লাগছে। মোটামুটি সবাই বলেছেন আমার চরিত্রটি অনেক চ্যালেঞ্জিং। কারণ আমার চরিত্রে তিনটি শেড রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা আমার জন্য একটু কঠিনই ছিলো। ডলি জহুর আন্টি আমার অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, ‘এই ছোট মেয়েটা এখন এতো ভালো অভিনয় করছে!’ সম্পূর্ণ সিনেমায় আমাকে দেখে তিনি নাকি মুগ্ধ। আমার অভিনয় খুবই ভালো লেগেছে তার। তার বলার ভঙ্গি দেখেই বুঝতে পারছিলাম তিনি বেশ মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি সত্যিই ভালোবেসে আমাকে কথাগুলো বলছিলেন। ডলি আন্টি শুধু আমার জন্যই সিনেমাটি দেখতে গিয়েছিলেন।

বিদ্যা সিনহা মিম (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘পরাণ’ সিনেমাকে আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ভাবা হচ্ছে, আপনিও কি তা মনে করেন?
মিম: ‘পরাণ’ সিনেমাকে আমার টার্নিং পয়েন্ট ভাবতে পারি। অনেকে সেটাই মনে করছেন। কারণ এটি ব্লকবাস্টার হিট। মুক্তির একমাস পরও সিনেমার টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা আমাদের বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক বছর পর ঘটেছে। এমন অবস্থায় যদি বলি আমার অভিনীত সিনেমা আগেও হিট হয়েছে। যেমন ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’, ‘আমার আছে জল’, ‘সুলতান’, ‘ব্ল্যাক’– এগুলো কিন্তু হিট ছবি। কিন্তু আমার মনে হয় সেগুলোর চেয়েও ‘পরাণ’ ব্লকবাস্টার হিট। এটি আমার ক্যারিয়ারের জন্য শুধু নয়, বাংলা ফিল্মের জন্য অন্যরকম একটি ইতিবাচক বিষয়।

সিনেমা হিট হয় ঠিকই, কিন্তু এক-দুই সপ্তাহ তার রেশ থাকে। একমাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও ‘পরাণ’ নিয়ে মানুষের উন্মাদনা দেখলে এমন একটা অনুভূতি হয় যেন, এই তো মাত্রই মুক্তি পেয়েছে! সিনেমাটিতে বিদ্যা সিনহা মিমকে দর্শকরা অন্যভাবে দেখেছে। এর আগে এমন ভিন্ন ধরনের চরিত্রে কখনও কাজ করিনি। অনন্যা অনেক চ্যালেঞ্জিং একটি চরিত্র ছিলো।

‘পরাণ’ সিনেমার দৃশ্যে শরিফুল রাজের সঙ্গে বিদ্যা সিনহা মিম (ছবি: লাইভ টেকনোলজিস)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘পরাণ’-এর সাফল্যের সুবাদে দায়িত্ব বেড়ে যাওয়ায় নতুন কাজ বেছে নেওয়া কি কঠিন হয়ে গেলো?
মিম: হ্যাঁ, এখন প্রচুর কাজের প্রস্তাব আসছে। তবে একটু বেছে বেছে কাজ করবো। ইতোমধ্যে বেশকিছু সিনেমার স্ক্রিপ্ট হাতে এসেছে, কিন্তু একটু চিন্তা-ভাবনা করেই বেছে নিতে চাই।

সিনেমাওয়ালা নিউজ: রায়হান রাফির পরিচালনায় ‘দামাল’ সিনেমায়ও কাজ করেছেন। এটি কি পরাণকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে?
মিম: ‘দামাল’ যুদ্ধ ও ফুটবলের প্লট নিয়ে সাজানো। এতে আমার চরিত্রটি খুব ভিন্ন ধরনের। এখন ‘পরাণ’ নিয়ে যে মাতামাতি চলছে, এরপর থেকে যত ছবি মুক্তি পাবে সবই যেন ভালো হয় সেই আশা করি। আশা করছি, ‘দামাল’ও মানুষ এভাবেই দেখবে। তবে ‘পরাণ’কে ছাড়িয়ে যাবে কিনা সেটি এখনই বলা যাবে না। কারণ ‘পরাণ’ একটু অস্বাভাবিক ধরনের সিনেমা। তাই এটি বলা আসলেই মুশকিল। তবে এতটুকু বলতে পারি ‘দামাল’ও দর্শকদের মুগ্ধ করবে।