Connect with us

ঢালিউড

বাবাকে ছাড়া দুর্গাপূজা, চঞ্চলের স্মৃতিতে ২০ টাকা মজুরিতে বানানো জামার ঘ্রাণ

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

বাবার সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

শারদীয় দুর্গোৎসব চলছে। কিন্তু অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর মনে তেমন একটা রঙ লাগেনি। কারণ বাবাকে (রাধাগোবিন্দ চৌধুরী) হারানোর পর এবারই প্রথম দুর্গাপূজা কাটছে তার। বাবা পাশে না থাকায় উৎসবের দিনগুলো মলিন লাগছে জনপ্রিয় এই তারকার। বাবাকে নিয়ে দুর্গাপূজার কিছু স্মৃতিকথা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন তিনি।

গতকাল (২১ অক্টোবর) ফেসবুকে চঞ্চল লিখেছেন, ‘কিছুটা সমর্থ হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর পূজায় সবার আগে বাবা-মায়ের জন্য নতুন পোশাক কেনা আমার জন্য ছিলো সবচেয়ে বড় প্রশান্তির, সবচেয়ে বড় আনন্দের অভ্যাস। এবারও নিজের হাতে সবার জন্য নতুন কাপড় কেনার তালিকা তৈরি করতে গিয়ে প্রথমেই বাবার নামটা লিখে ফেলেছি। হঠাৎ মনে হলো, আরে বাবা তো নেই। চুপ করে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। চোখের জল কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছিলাম না। গত বছর বাবা চলে গেছেন পরলোকে। জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাবা-মাকে ছাড়া কোনো দুর্গাপূজা পালন করিনি। এবারই প্রথম বাবা নেই। বাবার জন্য কিছু কেনাও হয়নি।’

চঞ্চল যোগ করেছেন, “বাবা বেঁচে থাকলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম, ‘প্রথম যে বছর আমি দুর্গাপূজায় তোমার জন্য পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলাম, সেই নতুন পাঞ্জাবির ঘ্রাণটা তোমার কাছে কেমন লেগেছিলো বাবা?’ শুদ্ধ কি পূজায় আমার কিনে দেওয়া নতুন শার্ট বা পাঞ্জাবিতে কোনো ঘ্রাণ খুঁজে পায়?”

ফেসবুক স্ট্যাটাসের শুরুতে শৈশবের পূজার স্মৃতি রোমন্থন করেছেন চঞ্চল, ‘ছোটবেলায় আমাদের গ্রামে দুর্গাপূজার আমেজ শুরু হতো এক মাস আগে থেকেই। পাল মশাইয়ের প্রতিমা বানানো থেকে শুরু করে দেবীর বিসর্জন পর্যন্ত, কী যে এক আনন্দোৎসব! সারাবছর ধরে অপেক্ষা করতাম কবে আসবে এই উৎসব! শরতের কাশফুলে সাদা হয়ে থাকতো পদ্মার চর। সবচেয়ে বড় লোভ, আনন্দ আর উত্তেজনা কাজ করতো নতুন পোশাক পাওয়ার আশায়।’

চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

হারানো দিনের কথা জানাতে চঞ্চল উল্লেখ করেন, ‘সারাবছর তেমন নতুন পোশাক আমাদের কপালে জুটতো না। কঠিন দারিদ্রতার ভেতরেও পূজার সময় বাবা সাধ্যমতো চেষ্টা করতেন সব ভাইবোনকে নতুন কাপড় কিনে দেওয়ার। সারাবছরে একমাত্র এই পূজাতেই আমাদের সৌভাগ্য হতো নতুন পোশাক পরার। ছিট কাপড় কিনে বাবা নিজের সঙ্গে করে শার্টের মাপ দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতো দর্জির কাছে। প্রতিদিন দর্জির কাছে গিয়ে বসে থাকতাম কাপড় কাটা হলো কিনা, সেলাই হলো কতটুকু, বোতাম লাগানো শেষ হলো কিনা দেখার জন্য। আহারে কতো কতো অপেক্ষা! যেদিন শার্টটা হাতে পেতাম, সে যে কী আনন্দ! নতুন কাপড়ের আনন্দ, পূজার আনন্দ। নতুন কাপড়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যেতাম। এভাবেই কেটে গেছে অনেক বছর। আস্তে আস্তে বোনগুলোর বিয়ে হয়ে গেছে সমর্থ পরিবারে। আমরা ভাইয়েরাও লেখাপড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি যার যার মতো। বাবা-মায়ের নিদারুণ কষ্টের সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। এখন আমরা নিজেদের সন্তানসহ, আত্মীয়-স্বজন অনেককেই পূজার সময় নতুন পোশাক কিনে দেই সাধ্যমতো। এখন আমার ঘরভর্তি কতো কতো নতুন পোশাক! সেগুলো পরার সময়ও পাই না ঠিকমতো। প্রতিবছর পূজায় এখন আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধব থেকেও অনেক নতুন পোশাক উপহার পাই। কিন্তু সেই পোশাকে কেন জানি সেই আগের নতুন গন্ধ পাই না, যে গন্ধ পেতাম বাবার কিনে দেওয়া ছিট কাপড় থেকে বাজারের দর্জির বানানো শার্টে! যে গন্ধে বুদ হয়ে থাকতাম, ছিলাম বহু বছর।’

বাবার সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

এরপর চঞ্চল লিখেছেন, ‘যে ঘ্রাণ এখনও আমার নাকে-মুখে সারা শরীরে লেপ্টে আছে। সেই আমার বাবার কিনে দেওয়া ছিট কাপড় থেকে একমাস ধরে দর্জির ২০ টাকা মজুরিতে বানানো জামার গন্ধ। বাবা, তুমি ওই রকম একটা গন্ধ হয়ে আমৃত্যু আমার শরীরে মেখে থেকো। যেখানেই থাকো ভালো থেকো বাবা। এবার পূজাতেও হয়তো বাড়িতে গেলে গাড়ির হর্ন শুনে, গেটের বাইরে এসে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে– রাস্তায় কোনো কষ্ট হয়নি তো বাবা?’

সবশেষে সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চঞ্চল। তার প্রার্থনা, ‘মা দুর্গা সকলের মঙ্গল করুন।’

এদিকে গতকালই ব্লেন্ডার্স চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি অ্যান্ড ডিজিটাল কন্টেন্ট অ্যাওয়ার্ডসে সমালোচকদের দৃষ্টিতে সেরা অভিনেতা শাখার পুরস্কার পেয়েছেন চঞ্চল। হইচইয়ের ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’-এর জন্য এই স্বীকৃতি উঠেছে তার হাতে।

চঞ্চলের নতুন সিনেমা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ মুক্তি পেয়েছে গত ১৩ অক্টোবর। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা শেখ লুৎফর রহমান চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় সিনেমাটিতে নাম ভূমিকায় আছেন আরিফিন শুভ।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ