Connect with us

ওয়ার্ল্ড সিনেমা

বুসানে স্মরণীয় হয়ে থাকার ‘বাংলাদেশ নাইট’

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাওয়া বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পী-নির্মাতাদের মাঝে উৎসবটির পরিচালক ন্যাম ডং চাল (ছবি: চরকি)

বুসান আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথমবার উদযাপন করা হলো ‘বাংলাদেশ নাইট’। সোমবার (৯ অক্টোবর) স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরের লাভি ডি অ্যাটলান হোটেলের গ্যাটসবি রুফটপ বারে ছিলো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির এই আয়োজন। বাংলাদেশের সিনেমার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই রাত।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পর্দায় দেখানো হয় কান, টরন্টো, বুসান, রটারড্যামসহ বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাচিত বাংলাদেশি ছবির পোস্টার ও এগুলোর পরিচালকদের স্থিরচিত্র। এরমধ্যে রয়েছে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’, গোলাম রব্বানী বিপ্লবের ‘স্বপ্নডানায়’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ ও ‘টেলিভিশন’, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, নুহাশ হুমায়ূনের ‘মশারি’ ও ‘পেট কাটা ষ’। এছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ছবির প্রতিনিধিত্ব করা রুবাইয়াত হোসেন, কামার আহমাদ সাইমন, আবু শাহেদ ইমন, বিজন ইমতিয়াজ ও আরিফুর রহমানের কৃতিত্বের কথা তুলে ধরা হয়।

রেদওয়ান রনি, নুসরাত ইমরোজ তিশা ও নাসির উদ্দিন খান (ছবি: চরকি)

ভিডিওচিত্রের সবশেষ অংশে ছিল ২৮তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের জিসোক বিভাগে নির্বাচিত মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ এবং নিউ কারেন্টস বিভাগে নির্বাচিত ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর ‘বলী’ এবং বিপ্লব সরকারের ‘আগন্তুক’ ছবির কথা। এছাড়া ছিলো বাংলা সিনেমার যাত্রায় চরকির অংশগ্রহণের ধারাবর্ণনা।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, রেদওয়ান রনি ও নুসরাত ইমরোজ তিশা (ছবি: চরকি)

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরে এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বুসান আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ২৮তম আসর শুরু হয় গত ৪ অক্টোবর। এতে জিসোক প্রতিযোগিতা শাখায় আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’। নিউ কারেন্টস শাখায় নির্বাচিত হয়েছে বিপ্লব সরকারের ‘আগন্তুক’ এবং ইকবাল হোসাইন চৌধুরী পরিচালিত ‘বলী’। এবারই প্রথম বুসানে একই আসরে বাংলাদেশের তিনটি ছবি প্রতিযোগিতায় স্থান পেয়েছে।

(বাঁ থেকে) ইকবাল হোসাইন চৌধুরী, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ন্যাম ডং চাল, রেদওয়ান রনি, বিপ্লব সরকার ও রবিউল আলম রবি (ছবি: চরকি)

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সিনেমার দারুণ সাফল্য উদযাপনের রাতে প্রধান অতিথি ছিলেন বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পরিচালক ন্যাম ডং চাল। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি সিনেমার জন্য এই রাত খুব গুরুত্বপূর্ণ। বুসানে এবারের আসরে বাংলাদেশের তিনটি সিনেমা দুটি প্রতিযোগিতায় এবং একটি স্ক্রিপ্ট আছে এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে। এজন্য বাংলাদেশের ফিল্মমেকারদের অভিনন্দন জানাই। ছবিগুলো সত্যিই দারুণ। দর্শকদেরও এই তিনটি চলচ্চিত্র দেখে ভালো লেগেছে। বাংলাদেশি সিনেমার সর্বশেষ ১০-১২ বছরের এগিয়ে চলা দেখে আমরা খুবই আনন্দিত।’

রেদওয়ান রনি, নুসরাত ইমরোজ তিশা (ছবি: চরকি)

নিজের বক্তব্য শেষে উৎসবের প্রতিযোগিতা থাকা তিন সিনেমার পরিচালকদের আমন্ত্রণ জানান উৎসবের পরিচালক ন্যাম ডং চাল। তারপর একে একে অন্যরা যোগ দেন। ‘বাংলাদেশ নাইট’কে স্মরণীয় করে রাখতে সবাই মিলে একফ্রেমে বন্দি হয়েছেন। ছবি তোলার পর অতিথিরা গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠেন। বাংলাদেশ থেকে আসা অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতারাদের সঙ্গে পরিচিত হন সবাই।

‘বলী’ সিনেমার কলাকুশলীরা (ছবি: চরকি)

‘বলী’ ছবির পরিচালকের সঙ্গে এসেছেন অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান, প্রযোজক পিপলু আর খান। ‘আগন্তুক’ ছবির পরিচালকের পাশাপাশি ছিলেন অভিনেত্রী সাহানা রহমান সুমি, শিশুশিল্পী সালমান রহমান রাফসান ও প্রযোজক তাজুল হক।

‘আগন্তুক’ সিনেমার কলাকুশলীরা (ছবি: চরকি)

বুসানের এবারের আসরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরো আছেন এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে স্থান পাওয়া ‘সুরাইয়া’র পরিচালক রবিউল আলম রবি ও প্রযোজক ফজলে হাসান শিশির এবং বুসান এশিয়ান ফিল্ম অ্যাকাডেমির ফেলো হিসেবে আসা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মশারি’র চিত্রগ্রাহক এজাজ মেহেদি।

‘বাংলাদেশ নাইট’ উদযাপন করতে আসা বিভিন্ন দেশের অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রোগ্রামার পার্ক সুন ইয়াং, কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অফিসিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর সহ-প্রযোজক জেরেমি চুয়া, ভ্যারাইটির এশিয়া সম্পাদক প্যাট্রিক ফ্রেটার, ভ্যারাইটির আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি নমন রামাচন্দ্রন, সিডনি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পরিচালক নাশেন মুডলি, ফ্রিবুক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পরিচালক থিয়েরি জ্যঁবা, ভেসুল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের পরিচালক মার্তা তেরোয়ান ও জ্যঁ-মার্ক তেরোয়ান, টোকিও ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সিনিয়র প্রোগ্রামার ইশিজাকা কেনজি। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরিচালক-প্রযোজকসহ অনেকে অংশ নেন অনুষ্ঠানে।

বিভিন্ন দেশের ফিল্ম প্রফেশনালদের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পী-নির্মাতারা (ছবি: চরকি)

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র মাধ্যমে এবারই প্রথম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির সিনেমা বুসানের প্রতিযোগিতায় জায়গা পেয়েছে। সিনেমাটির প্রযোজক চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেদওয়ান রনি ‘বাংলাদেশ নাইট’ সঞ্চালনা করেন। তাকে সঙ্গ দেন ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র গল্পকার-চিত্রনাট্যকার ও অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র দৃশ্যে নুসরাত ইমরোজ তিশা ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী (ছবি: চরকি)

বুসানে তিন কিংবা ততধিক পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা পরিচালনা করা এশিয়ার প্রতিষ্ঠিত নির্মাতাদের প্রতিযোগিতা বিভাগ জিসোক। এতে নির্বাচিত হয়েছে চরকির ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রকল্পের অংশ ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’। গত ৮ অক্টোবর এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। সোমবার সকাল ৯টায় বুসানের লটে সিনেমা সেন্টাম সিটি ফোরে আবারও এটি দেখানো হয়। এরপর ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। আগামী ১১ অক্টোবর রাত ৯টায় লটে সিনেমা সেন্টাম সিটি টেন থিয়েটারে আরেকবার সিনেমাটি দেখানো হবে।

‘বলী’ সিনেমার দৃশ্যে নাসির উদ্দিন খান (ছবি: অ্যাপলবক্স ফিল্মস লিমিটেড)

অন্যদিকে বুসান সিনেমা সেন্টারের সিনেমা টুতে গত ৭ অক্টোবর সকালে ‘আগন্তুক’ এবং বিকালে ‘বলী’র ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। পরদিন সিজিভি সেন্টাম সিটি থ্রিতে বিকালে ‘বলী’ এবং রাতে ‘আগন্তুক’ আবারও দেখানো হয়। সোমবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে লটে সিনেমা সেন্টাম সিটি টেনে ‘বলী’র আরেকটি প্রদর্শনী হয়েছে। একই ভেন্যুতে আগামী ১১ অক্টোবর দুপুরে ‘আগন্তুক’ আবারও দেখা যাবে।

‘আগন্তুক’ সিনেমার দৃশ্যে সাহানা রহমান সুমি ও নাঈমা তাসনিম (ছবি: মোয়ো কিনো)

গত ৪ অক্টোবর শুরু হওয়া ১০ দিনব্যাপী বুসান উৎসবের পর্দা নামবে ১৩ অক্টোবর। সমাপনী আয়োজনে জিসোক এবং নিউ কারেন্টস বিভাগের বিজয়ী ছবির নাম ঘোষণা ও পুরস্কার প্রদান করা হবে।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ