ঢালিউড
‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়, ফারুকীর সেরা দিন
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাকে সেন্সর ছাড়পত্র দিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন নির্মাতা, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) দুপুর থেকে ফেসবুক জুড়ে ‘ফ্রি স্যাটারডে আফটারনুন’ ও ‘রিলিজ স্যাটারডে আফটারনুন’ হ্যাশট্যাগ ছড়িয়ে পড়েছে। সবার আহ্বান, ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি পাক। সিনেমাটি আটকে রাখায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বাণিজ্যিক সিনেমার পরিচালক মালেক আফসারী তথ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বাংলাদেশে এই প্রথম একটি সিনেমা হয়েছে এক শটে। একবার ক্যামেরা অন করেছে এবং সিনেমা শেষ হওয়ার পর ক্যামেরা অফ হয়েছে। পৃথিবীতে এমন ছবি হয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি দীর্ঘদিন ধরে সেন্সরে আটকে আছে। চলচ্চিত্রে এখন সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। সেই ধারাকে অব্যাহত রাখতে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমা খুবই দরকার।’
নির্মাতা অনিমেষ আইচ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘লাইভে এসে আত্মহত্যা দেখি, বিডিআর বিদ্রোহ লাইভ দেখি, বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে দেখি, পিকে হালদারের দুর্নীতি তাও দেখি শান্ত দু’চোখে। একটা সিনেমা দেখতে গেলেই হয়তো আমাদের ঘুমিয়ে থাকা গতজন্মে মৃত আত্মা জেগে উঠবে। তাই দেখি না, দেখাতে পারি না। ‘শনিবার বিকেল’ মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত একটি সিনেমা, তিন বছর ধরে পড়ে আছে তিমিরে। সিনেমার সঙ্গে কেন এমন ফ্যাসিস্ট আচরণ?’
‘হাওয়া’ সিনেমার পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন লিখেছেন, ‘আঁকো ফুল আঁকো প্রজাপতি/ এঁকো না কখনও স্বদেশের মুখ/ তোবড়ানো গাল ভেঙে যাওয়া বুক/ শনিবার বিকেল মুক্তি পাক।’
অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদের আহ্বান, ‘শনির দশা কেটে যাক! ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি পাক!’
অভিনেতা ইমতিয়াজ বর্ষণের মন্তব্য, ‘সেন্সর বোর্ডের অনাকাঙ্ক্ষিত নিষেধাজ্ঞার বাতিল চাই। ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমা হলে বসে দেখতে চাই।’
নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও রেদওয়ান রনির আহ্বান, ‘চলচ্চিত্র কারাগারের তালা খুলে যাক, শনিবার বিকেল মুক্তি পাক।’
চয়নিকা চৌধুরী লিখেছেন, ‘মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ দেখার জন্য সেই শুটিং চলাকালীন থেকে অপেক্ষা করে আছি, যা সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছে। সিনেমাটি বিদেশে অনেক প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমান জোয়ারে সিনেমাটি যেন মুক্তি পায় সেই প্রার্থনা।’
চিত্রনায়ক ইমন ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার পোস্টার শেয়ার করে বলেন, ‘সিনেমা হলে দেখতে চাই।’
এছাড়া নির্মাতা রায়হান রাফি, কাজল আরেফিন অমি, আবু শাহেদ ইমন, ইমেল হক, আফজাল হোসেন মুন্না, ইশতিয়াক আহমেদ রুমেল, নিয়ামুল মুক্তা, মাহমুদুর রহমান হিমি সিনেমাটিকে ছাড়পত্র দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা উল্লেখ করেন, ‘আমাদের শিল্পী বা কলাকুশলীদের জন্য একটি দারুণ অভিজ্ঞতা ছিলো ‘শনিবার বিকেল’! সিনেমাটি বিনা কারণে আজ সাড়ে তিন বছর সেন্সর বোর্ডে আটকা। অবিলম্বে ছবিটির মুক্তি চাই!’
সবার সমর্থন পেয়ে আবেগাপ্লুত ফারুকী। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) ফেসবুকে নিজের অনুভূতিতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি একা খেতে পারি না। একা চলতে পারি না। একাকীত্বকে আমার ভীষণ ভয়। এই দুই দিনে আমার সতীর্থ ফিল্মমেকাররা ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির দাবিতে যেরকম স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সোচ্চার হয়েছে তাতে বহুবারই আমার চোখ ভিজেছে। সাধারণত এসব প্রতিবাদ সংগঠিত করতে হয় ফোন করে, সভা করে। কিন্তু আমি তো কাউকে ফোন করি নাই, কথাও বলি নাই। তারপরও আপনারা যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে বহুবার চোখ ভিজেছে। আপনারা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন– আমি একা নই, আমি আপনাদেরই একজন। এটা আমাদের জীবনের অন্যতম সেরা একটি দিন। সবাইকে ভালোবাসি। আসুন, একসঙ্গে থাকি এবং কোনো ফিল্মমেকারের সহযোগিতা প্রয়োজন হলে পাশে দাঁড়াই।’
২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডের সনদ পাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও এখনো আটকে আছে ‘শনিবার বিকেল’। অথচ সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা এর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ফেস্টিভ্যালে সমালোচক পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছে এই সিনেমা। এছাড়া মিউনিখ, সিডনিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে এটি। দেশের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ’ হতে পারে এমন আশঙ্কায় সিনেমাটির মুক্তি আটকে দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে রয়েছে।
গত ৭ আগস্ট সকালে ফেসবুকে ফারুকী লিখেছিলেন, ‘আজ সকাল সকাল মনটা খারাপ হয়ে গেলো! এরকম কতো সকাল যে আমার গেছে। আমি একটা ছবি বানাইছি ‘শনিবার বিকেল’ নামে, যেটা সেন্সর বোর্ড সদস্যরা দেখে বিভিন্ন পত্রিকায় বলেছিলেন, ‘আমরা দ্রুতই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি।’ তারপর এক অদৃশ্য ইশারায় সিনেমাটির দ্বিতীয়বার দেখেছেন তারা। তারপর বলে দিলেন, সিনেমা নিষিদ্ধ। আমরা আপিল করলাম। আজ সাড়ে তিন বছর হলো আপিলের। কোনো উত্তর নাই। আমাদেরও বুঝি কিছু বলার নাই। কারণ তারাপদ রায়ের কবিতার মতো আমাদের কখন সর্বনাশ হয়ে গেছে আমরা টেরও পাইনি।’
ফেসবুক স্ট্যাটাসটির সঙ্গে এশিয়ান সিনেমা নির্ভর ম্যাগাজিন ইস্টার্ন কিকসে প্রকাশিত ‘শনিবার বিকেল’-এর একটি রিভিউ শেয়ার করেন ফারুকী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা আমি আগে পড়ি নাই। পড়ে মনে হলো আমরা ফুল, পাখি, লতা-পাতা নিয়া ছবি বানালে ‘ঠিক আছে’! এমন কিছু বানানো যাবে না যেখানে আমাদের চেহারা দেখা যায়। কিন্তু আমি তো চিরকাল সেসব গল্পই বলে আসছি যেখানে আমাদের চেহারা দেখা যায়, সেটা প্রেমের গল্পই হোক আর রাজনীতির গল্পই হোক। আমি তো অন্য কিছু পারি না। তাহলে পাখি সব যে রব করবে, সেটা কি নতুন সুরে করতে হবে? নতুন সুর শিখতে হবে?’
পরদিন (৮ আগস্ট) বিকালে ‘শনিবার বিকেল’ প্রসঙ্গে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন ফারুকী। এবার তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘দুই দিন পর যে হলি আর্টিজান নিয়ে ভারত থেকে একটা সিনেমা মুক্তি পাবে, সেটা কি আপনারা আটকাতে পারছেন? সেটার বেলায় আপনাদের কি কথা?’
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকালে ‘শনিবার বিকেল’ আটকে রাখায় ফেসবুকে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফারুকী। তার কথায়, ‘আমার কতো রাত গেছে অনিদ্রায়। কতো দিন গেছে ক্ষমতাবানদের দুয়ারে হাত মুছতে মুছতে। কতো দুপুর গেছে রাগে অন্ধ হয়ে। কতো বছর গেছে নিজের চিৎকার নিজেই গিলে ফেলে। ধন্যবাদ, হে রাষ্ট্র! ফিল্মমেকিংয়ের চেয়ে বড় কোনো অপরাধ তো আর নাই। সুতরাং, ঠিকই আছে। তোমাকে ধন্যবাদ, আমাকে ঠিকঠাক সাইজ করার জন্য।’
ফারুকী তার আগের সিনেমাগুলোর বেলায় ঘটে যাওয়া অযাচিত কিছু ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাচেলর’-এর সময় তুমি ভাবছো আমার ছবি সমাজ নষ্ট করে ফেলবে! ‘মেড ইন বাংলাদেশ’-এ ভাবছো এই ছবি দেশ ধ্বংস করবে! সুতরাং দেড় বছর সেন্সর জেলে রাখছো! ঠিকই আছে। ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার’-এর জন্য সেন্সরের জেলটা একটা বোধ হয় কম হয়ে গিয়েছিলো। অপরাধ বিবেচনায় ওই সিনেমা আটকে রাখা উচিত ছিলো তিন বছর। যাই হোক ‘শনিবার বিকেল’-এ সেটা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’
এরপর তীর্যকভাবে ফারুকী লিখেছেন, ‘উঠতে বসতে এভাবে পিটিয়ে ছাল তোলার জন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু এভাবে বোধ হয় পুরোপুরি হবে না। কারণ একটা ছবি ভাবা হয়ে গেলে তো সেটা দুনিয়াতে এগজিস্ট করে গেলো। বানানো হলে তো আরো শক্তভাবে এগজিস্ট করলো। আজ হোক কাল হোক সেটা তো দেখে ফেলবে মানুষ। তাই বলি কী, এমন কিছু একটা করো যাতে ভাবনাটাও বন্ধ করে দেওয়া যায়। এমন ওষুধ আবিষ্কার করো হে রাষ্ট্র, যাতে কারো মনে ক্ষোভ জন্ম না নেয়! কারণ সম্মিলিত ক্ষোভের চেয়ে বিধ্বংসী কোনো অস্ত্র নাই! আরো খেয়াল রাখতে হবে ক্রমাগত চাপে এই ক্ষোভ যেন ঘৃণায় রূপ না নেয়। কারণ কে না জানে ঘৃণার চেয়ে বড় কোনো মারণাস্ত্র নাই।’
মূলত ফারুকীর এই ফেসবুক স্ট্যাটাসের পরই ‘শনিবার বিকেল’কে ছাড়পত্র দিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। বুধবার (১০ আগস্ট) সকাল থেকেও অনেকে সিনেমাটির পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন।
জাজ মাল্টিমিডিয়া, ছবিয়াল ও ট্যানডেম প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১২টি দেশের অভিনয়শিল্পী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশের জাহিদ হাসান, মামুনুর রশীদ, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক প্রমুখ।
-
ছবি ও কথা1 year ago
তাসনিয়া ফারিণের বিয়ের কিছু ছবি
-
বলিউড2 years ago
‘ব্রহ্মাস্ত্র’ নিয়ে ক্যাটরিনার মধুর প্রতিশোধ!
-
নাটক2 years ago
আমেরিকায় ফুরফুরে মেজাজে মেহজাবীন-তানজিন তিশা-ফারিণ
-
ওয়ার্ল্ড সিনেমা1 year ago
বুসানে ফারুকী-তিশার সিনেমা দেখতে দর্শকদের ভিড়
-
ঢালিউড1 year ago
রাষ্ট্রপতি সিনেমাহলে সপরিবারে ‘প্রিয়তমা’ দেখলেন
-
ওয়ার্ল্ড সিনেমা1 year ago
‘জেলার’ হিট হওয়ায় ১০০ কোটি রুপি ও বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার পেলেন রজনীকান্ত
-
ঢালিউড2 years ago
শাকিবের ‘প্রিয়তমা’ কলকাতার এই নায়িকা
-
ঢালিউড2 years ago
‘বিউটি সার্কাস’: এমন চরিত্রে আর অভিনয় করবো না: ফেরদৌস