শবনম বুবলী (ছবি: ফেসবুক)

‘কোনো সম্পর্কে সমস্যা হওয়ার পর একজন যখন আরেকটি সম্পর্কে যুক্ত হন, সেজন্য কি নতুন মানুষ দোষী হয়ে যায়? আমাদের সমাজে অনেকেই নতুন সম্পর্কে যুক্ত হচ্ছেন না? তাদের যদি ভুল বোঝাবুঝি হয়, কোনো ঝামেলা তৈরি হয়, তারা যদি সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, এজন্য কি নতুন মানুষটি দায়ী? দর্শকের উদ্দেশে স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমার কারণে কারও সংসার ও সম্পর্ক ভাঙেনি’– কথাগুলো চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীর। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওর মাধ্যমে ব্যক্তিজীবন ও সাম্প্রতিক কিছু বিষয় নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তিনি।

ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক, ছেলে শেহজাদ খান বীর এবং শাকিবের সঙ্গে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন বুবলী। গতকাল (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফেসবুক পেজে ‘আমার কিছু কথা’ স্ট্যাটাস দিয়ে ৪১ মিনিট ২৫ সেকেন্ড ব্যাপ্তির ভিডিওটি শেয়ার করেন তিনি। এখন পর্যন্ত এটি দেখা হয়েছে ৩০ লাখ বারের বেশি। এতে লাইক পড়েছে ১ লাইক ৭২ হাজার।

অপু বিশ্বাস প্রসঙ্গ
বুবলীর দাবি, শাকিব খানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর সময় তার ও অপু বিশ্বাসের মধ্যকার সম্পর্কের কথা জানতেন না তিনি। তার কথায়, ‘২০১৬ সাল থেকে সিনেমায় শাকিব খানের সঙ্গে কাজ শুরুর সুযোগ পাই। তিনি আমাকে মেন্টর হিসেবে গাইড করতেন। তার মাধ্যমেই আমার ফিল্মে আসা। তখন আমি কেন, বাংলাদেশের কেউ কি তার আগের সম্পর্ক নিয়ে জানতেন? আমরা কেউই কিন্তু জানতাম না।’

তবে শাকিব-অপুর ছাড়াছাড়ির ঘটনায় অভিযোগের তীর ছুটে আসে বুবলীর দিকে। তার বক্তব্য, ‘আমি তো অনেক পরে এসেছি, তাদের বোঝাপড়ায় সমস্যা অনেক আগে থেকেই।’

শবনম বুবলী (ছবি: ফেসবুক)

এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, ‘অপু বিশ্বাস আমার অনেক সিনিয়র। তাকে অবশ্যই কাজের জায়গা থেকে সম্মান করি। তার সঙ্গে কখনো আমার সামনাসামনি দেখা হয়নি। ২০১৭ সালে তিনি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভে আসার আগে আমাকে ফোনে অনেক বাজে ব্যবহার করেন। এমন ব্যবহারের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমার কষ্টের জায়গা ছিলো, আমি তো কিছুই জানি না। কেনো আমাকে জড়িয়ে এভাবে বলা হচ্ছিলো? আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, আমি তো তেমন না। সেজন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম।’

সন্তান আব্রাম খান জয়কে নিয়ে অপু বিশ্বাস প্রকাশ্যে আসার পর শাকিবের কাছে ঘটনাটি জানতে চেয়েছিলেন বুবলী। কারণ শাকিব নিজেকে সিঙ্গেল বলেছিলেন। সেজন্য সম্পর্কে জড়ান বুবলী। তার ভাষ্য, ‘শাকিব খান আবেগপ্রবণ হয়ে আমাকে জানান, অনেকদিন ধরে এসব কথা আমাকে বলতে চেয়েছেন। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে তার একবছর ধরে যোগাযোগ নেই। অপুদি নিজেও লাইভ অনুষ্ঠানে এটি উল্লেখ করেছিলেন।’

শাকিব খানের কোলে আব্রাম খান জয়, পাশে অপু বিশ্বাস (ছবি: ফেসবুক)

বুবলী যোগ করেন, ‘শাকিব খানের কথা মেনে অপু বিশ্বাসকে তিনবার গর্ভপাত করতে হয়েছে, এটা আপনারা অনেকেই জানেন। চতুর্থবার বাধ্য হয়ে তিনি সন্তান নিয়েছেন। এসব ঘটনায় তো আমি নেই। তখন সিনেমাতেই আমার অস্তিত্ব নেই। কেনো আমাকে দোষারোপ করা হলো যে, আমার কারণে কারও সংসার ভেঙেছে? শাকিব খান নিজেই আমাকে বলেছেন, তিনি অপু বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কে সুখী নন। তিনি তার জায়গা থেকে আমাকে অনেক কিছুই বলেছেন। তার সম্মানার্থে আগেও এসব বলিনি, আজও বলবো না। তাদের ডিভোর্স হয়ে যাওয়াটা তো সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। কারণ তারা পরিণত মানুষ।’

শবনম বুবলী (ছবি: ফেসবুক)

বেবি বাম্পের ছবি
গত ২৭ সেপ্টেম্বর শাকিব-অপুর ছেলে জয়ের জন্মদিনে হঠাৎ নিজের গর্ভাবস্থার (বেবি বাম্প) ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন বুবলী। এ কারণে জন্ম নেয় অনেক প্রশ্ন। বুবলীর জবাব, ‘জয়ের ব্যাপারে শাকিব খানকে কতটা ইতিবাচক থাকতে বলি, সেটি তিনি ও তার কাছের মানুষেরা জানেন। এসব বিষয় কখনো সামনে আনতে চাইনি। অনেকের সম্মানের কথা ভেবে আজও অনেক কিছু বলছি না। জয়কে কতটা সমর্থন করি সেটি শাকিব খান খুব ভালোভাবেই জানেন। ওর সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্য সবরকম পরামর্শ দিয়েছি। আমার বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ্যে আনার বিষয়টা ওর জন্মদিন ভেবে করিনি। যতদূর জানি, জয় এবার ছয় বছরে পড়েছে। এর আগে কয়েক বছর গেছে, আমি তো ওর কোনো জন্মদিনে এমনটা করিনি। সবসময় ওর জন্য ভালোবাসা, দোয়া দিয়ে এসেছি। আমিও তো একটা মানুষ, আমারও তো কষ্ট থাকতে পারে। আমি তো শুধু বেবি বাম্পের ছবি দিয়েছি। কাউকে দোষারোপ করে তো কিছু বলিনি। শুধু নিজের আবেগের জায়গা থেকে একটা বিষয় শেয়ার করেছি।’

তাজমহলে শাকিব খান ও শবনম বুবলী (ছবি: ফেসবুক)

তাজমহলের ছবি
ভারতের উত্তর প্রদেশে আগ্রায় তাজমহলে সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের শোবার ঘরে শাকিবের সঙ্গে তোলা একটি ছবি নিজের জন্মদিনের পরের দিন (২১ নভেম্বর) শেয়ার করেন বুবলী। বিয়ের পর শুটিংয়ের ফাঁকে অল্প সময়ের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন তারা। তার এই পোস্ট নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ প্রসঙ্গে বুবলীর বক্তব্য,

নাকফুল উপহার বিতর্ক
গত ২০ নভেম্বর ছিলো শবনম বুবলীর জন্মদিন। তিনি জানান, জন্মদিনে শাকিব খান হীরাখচিত একটি নাকফুল উপহার দিয়েছেন তাকে। কিন্তু শাকিব অস্বীকার করেন। এ প্রসঙ্গে ভিডিওতে বুবলী বলেন, ‘কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে কিছু উপহার দিলে সেটা যদি প্রমাণ করতে হয়, তাহলে এ নিয়ে কথা বলাই উচিত না। তিনি যেটা ভালো মনে করেছেন বলেছেন। তারপরও যদি কিছু প্রমাণ করতে যাই তাহলে তাকে অসম্মান করা হবে।’

টাইমস স্কয়ারে শাকিব খান ও শবনম বুবলী (ছবি: ফেসবুক)

আর্থিক সহায়তা না নেওয়ার দাবি
২০১৮ সালের ২০ জুলাই বিয়ে করেন শাকিব খান ও শবনম বুবলী। ২০২০ সালের ২১ মার্চ তাদের ছেলে শেহজাদ খান বীর জন্ম নেয়। ছেলেকে নিয়ে আমেরিকায় প্রায় একবছর থাকতে হয়েছিলো বুবলীকে। সেখানে থাকাকালীন তাকে ১৫ হাজার ডলারের মতো দিয়েছিলেন শাকিব। তখন অনেক টাকা খরচ হয়েছিলো। বাকি প্রায় ৩০ হাজার ডলারের মতো নিজেই বহন করেন তিনি।

বুবলীর দাবি, শাকিব খানের কাছ থেকে কখনো আর্থিক সহায়তা নেননি তিনি। তার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘অনেকে বলে থাকেন, আমি নাকি শাকিব খানের কাছ থেকে অনেক আর্থিক সহায়তা নিই। এটি পুরোপুরি ভুল। বিয়ে বা সন্তান আসার পর থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা নিইনি। স্বামী বা সন্তানের বাবা হিসেবে তার দায়িত্ব আছে। সেটি সম্পূর্ণ তার ওপর নির্ভর করে। আমার সন্তানের বয়স তিন বছরের কাছাকাছি, আজ পর্যন্ত কখনোই আর্থিক সহায়তা নিইনি। সমস্ত কিছু নিজেই বহন করছি।’

বুবলীর ভাষ্য, ‘আর্থিক সহায়তা নিয়ে অনেক ভুল খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। উপহারের বিষয়গুলো আলাদা।’

শাকিব খানের কোলে শেহজাদ খান বীর (ছবি: ফেসবুক)

সন্তানকে নিয়ে আমেরিকায় থাকাকালীন অনেক টাকা খরচ হয়েছিলো বলে জানান বুবলী। ওই সময়ে ১৫ হাজার ডলারের মতো দিয়েছিলেন শাকিব। বাকি অর্থ নিজে খরচ করেন নায়িকা।

বুবলীর ভাষ্য, ‘সন্তানকে নিয়ে আমেরিকায় থাকার সময়টাতে অনেক বড় অংকের খরচ হয়েছে। প্রায় এক বছরের মতো থাকতে হয়েছিলো। তখন তিনি (শাকিব) ১৫ হাজার ডলারের মতো হেল্প করেছিলেন। বাকি প্রায় ৩০ হাজার ডলারের মতো আমি নিজে বহন করেছিলাম। টাকার অংকটাও বললাম, কারণ এটা নিয়ে অনেক ভুল নিউজ হয়েছে। গিফট বা উপহারের বিষয়গুলো আলাদা। তবে আর্থিক সহায়তা কখনও নিইনি।’

শবনম বুবলীর কোলে শেহজাদ খান বীর (ছবি: ফেসবুক)

বীরের জন্য কান্না
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেলে শেহজাদ খান বীরের ছবি প্রথমবার শেয়ার করেন। এভাবে ছেলেকে প্রকাশ্যে আনা প্রসঙ্গে তার মন্তব্য, ‘ওর বিষয়টা একসঙ্গে সুন্দরভাবে সামনে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনোভাবে হচ্ছিলো না। প্রায় তিন বছর অপেক্ষা করেছি। ওর বিষয়টা সামনে আনার পর থেকে কারও বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি এবং আজও করছি না।’

ভিডিওর শেষ প্রান্তে গিয়ে ছেলে বীরের উদ্দেশে কথা বলদে গিয়ে বুবলীর চোখ ভিজে যায়। কান্না জড়ানো কণ্ঠে
তিনি বলেন, ‘বাবা শেহজাদ, মা হয়তো সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো না। কিন্তু অন্যান্য মায়ের মতো আমিও তোমাকে পৃথিবীতে আনা ও বড় করার জন্য অনেক কষ্ট করেছি। সবসময় তোমার পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো। তুমি মানুষের মতো মানুষ হও। একটি কথা মনে রেখো, তোমার মা-বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে। আমি হয়তো আমার জায়গা থেকে তোমার জন্য সেরাটা দিতে পারিনি। কিন্তু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা।’