Connect with us

হলিউড

হলিউডের অভিনয়শিল্পী ও চিত্রনাট্যকারদের যত দাবি, শঙ্কার নাম এআই

সিনেমাওয়ালা ডেস্ক

Published

on

(বাঁ থেকে) এমিলি ব্লান্ট, সিলিয়ান মারফি ও ফ্লোরেন্স পিউ (ছবি: টুইটার)

হলিউডের অভিনয়শিল্পীদের ইউনিয়ন স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড–আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টসের (এসএজি-এএফটিআরএ) ১ লাখ ৬০ হাজার সদস্য এবং রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকার (ডব্লিউজিএ) ১১ হাজার ৫০০ সদস্য ধর্মঘটে আছেন। ৬০ বছরেরও বেশি সময় পর হলিউডে একসঙ্গে দুটি ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। এতে আমেরিকার বেশিরভাগ সিনেমা ও টিভি অনুষ্ঠানের শুটিং থমকে আছে।

পারিশ্রমিক বৃদ্ধি ও ভালো কর্মপরিবেশের দাবিতে হলিউডের চিত্রনাট্যকারেরা গত ২ মে থেকে ধর্মঘট পালন করছেন। গত ১৩ জুলাই মধ্যরাত থেকে তাদের পথ অনুসরণ করেছেন অভিনয়শিল্পীরা।

হলিউডে চলছে ধর্মঘট (ছবি: টুইটার)

ধর্মঘটের কারণে হলিউডে নির্মাণাধীন সিনেমার কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমনকি শুটিং সম্পন্ন হয়ে যাওয়া সিনেমার ক্ষেত্রে পুনরায় শুটিং ও সংলাপ সংশোধনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য অভিনয়শিল্পীদের পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব টিভি অনুষ্ঠানের শুটিং চলমান রয়েছে, সেগুলোর কাজও বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই।

হলিউডে চলছে ধর্মঘট (ছবি: টুইটার)

শীর্ষস্থানীয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ডের (এসএজি) চাওয়া, লভ্যাংশের ন্যায্য বিভাজন এবং আরো ভালো কর্মপরিবেশ। এছাড়া তারা নিজেদের অভিনীত সিনেমা ও সিরিজের জনপ্রিয়তা অনুযায়ী বাড়তি সম্মানী দাবি করেছেন। সাধারণত বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচারের ক্ষেত্রে এটি দেওয়া হয়। কিন্তু স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে এই পন্থা অনুসরণ করা বেশ জটিল। কারণ নেটফ্লিক্সসহ অন্যান্য স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ভিউ’র হিসাব দেয় না। ফলে কোনটি ঠিক কতোটা জনপ্রিয় হচ্ছে বোঝা মুশকিল।

এ প্রসঙ্গে আমেরিকান সংবাদমাধ্যম হলিউড রিপোর্টারের এডিটর-ইন-চিফ কিম মাস্টার্স বলেন, ‘পুরনো নিয়মে অভিনয়শিল্পীরা ব্যবসায়িক সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে লভ্যাংশ পেতেন। নতুন নিয়মে তারা পর্দার আড়ালে কী ঘটছে জানতে পারবেন না। কারণ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম তাদের কিছুই জানায় না।’

হলিউডে চলছে ধর্মঘট (ছবি: টুইটার)

এদিকে ডিজিটাল প্রতিরূপের মাধ্যমে বেদখল হওয়া থেকে অভিনয়শিল্পীদের নিরাপদ রাখার দাবি উঠেছে। তাদের বদলি হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় এবং কম্পিউটারে তৈরি মুখ ও কণ্ঠ ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা চায় এসএজি।

এআই ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ দূর করতে অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউচার্স (এএমপিটিপি) প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মতে, এটি একটি যুগান্তকারী প্রস্তাব। এতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, অভিনয়শিল্পীদের ডিজিটাল প্রতিরূপ নিরাপদ থাকবে এবং এগুলো ব্যবহার কিংবা কোনো পরিবর্তন করতে হলে তাদের সম্মতি বাধ্যতামূলক।

হলিউডে চলছে ধর্মঘট (ছবি: টুইটার)

কিন্তু অভিনয়শিল্পীদের ইউনিয়ন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এসএজি’র জাতীয় নির্বাহী পরিচালক এবং প্রধান আলোচক ডানকান ক্র্যাবট্রি-আয়ারল্যান্ড বলেন, ‘এটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পারফরম্যান্স স্ক্যান করে একদিনের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সেসব ছবি ও অভিনয়শিল্পীদের প্রতিরূপসহ সব স্ক্যানের মালিক বনে যাবে। এরপর সেগুলো অনন্তকালের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। কেউ যদি মনে করেন এটি যুগান্তকারী প্রস্তাব, তাহলে তাকে আবার ভেবে দেখার পরামর্শ দেবো।’

ক্যালিফোর্নিয়ায় নেটফ্লিক্সের সদর দফতরের বাইরে গত ১৪ জুলাই সকালে অভিনয়শিল্পী ও চিত্রনাট্যকারদের অবস্থান ধর্মঘট শুরু হয়। এরপর প্যারামাউন্ট পিকচার্স, ওয়ার্নার ব্রাদার্স এবং ডিজনির প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন আন্দোলনকারীরা। ধর্মঘটের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হয়েছেন ‘বেটার কল সোল’ সিরিজের অভিনেতা বব অডেনকার্ক, ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’র অভিনেত্রী সিনথিয়া নিক্সন, অস্কারজয়ী বর্ষীয়ান অভিনেত্রী জেমি লি কার্টিস।

হলিউডে চলছে ধর্মঘট (ছবি: টুইটার)

স্বাস্থ্যসেবার কারণেই ধর্মঘটের মতো অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসএজি এবং ডব্লিউজিএ দুই ইউনিয়নের সদস্য মায়া গিলবার্ট-ডানবারের দাবি, এসএজি ইউনিয়নের অধিকাংশ সদস্যই ন্যূনতম মজুরির বেশি পান না। তারা দিনে ১৫০ ডলার আয় করতে পারেন খুব কমই। অনেকের জন্য এসএজি-এএফটিআরএতে যোগদানের একমাত্র কারণ স্বাস্থ্যবীমা। কিন্তু ১ লাখ ৬০ হাজার সদস্যের মাত্র ১৫ শতাংশ বছরে স্বাস্থ্যবীমার ২৬ হাজার ডলার জমা দিতে সক্ষম। তাছাড়া বয়স্ক অভিনেতাদের বীমা ৬৫ বছর হওয়ার পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এসএজি’র সভাপতি ফ্রান ড্রেশার (ছবি: টুইটার)

এসএজি’র সভাপতি ফ্রান ড্রেশার মনে করেন, ‘অভিনয়শিল্পীরা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ধর্মঘটে নেমেছেন। আমাদের সঙ্গে যা ঘটছে সব শ্রমজীবীদের বেলায় চিত্রটা একই রকম। প্রযোজক-পরিবেশকেরা টাকার পাহাড় গড়ে তোলার লোভে ডুবে আছেন। শোবিজ ইন্ডাস্ট্রি সুষ্ঠুভাবে চলমান রাখার জন্য প্রয়োজনীয় মানুষদের কথা ভুলে যান তারা।’

ধর্মঘটের প্রতিক্রিয়ায় সিনেমা ও টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজকদের জোট এএমপিটিপি জানিয়েছে, ‘অবশ্যই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমরা মোটেও আশা করিনি। কারণ টিভি অনুষ্ঠান ও সিনেমাকে জীবন্ত করে তোলেন অভিনয়শিল্পীরা। তাদের ছাড়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। এসএজি-এএফটিআরএ দুঃখজনকভাবে এমন একটি পথ বেছে নিয়েছে, যা শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষকে আর্থিক দুর্দশার দিকে ঠেলে দেবে।’

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ