Connect with us

টেলিভিশন

হুমায়ুন ফরীদির অবাক করা যে দুই ঘটনা দেখেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

হুমায়ুন আহমেদ ও হুমায়ুন ফরীদি (ছবি: ফেসবুক)

নামের প্রথম অংশে মিল থাকায় নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ ও কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি একে অপরকে মিতা সম্বোধন করতেন। হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’ এবং ‘দ্বিতীয় জন’ নাটকে দেখা গেছে তাঁকে।

হুমায়ুন ফরীদির জনপ্রিয়তার উদাহরণ দিতে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদ একবার নিজের লেখায় দুটি ঘটনার কথা জানিয়েছিলেন। মঞ্চের গণ্ডি পেরিয়ে টেলিভিশনে পা রাখা ফরীদির জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। তখন একদিন বেইলি রোডে হঠাৎ দেখেন ফুটপাতে আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন ও সিগারেট টানছেন ফরীদি। তাঁকে ঘিরে রাজ্যের ভিড়। মানুষ চোখ বড় বড় করে তাঁর চা ও ধূমপানের দৃশ্য দেখছে। যেন তাদের জীবন ধন্য! হঠাৎ আমার ওপর ফরীদির চোখ পড়লো।

হুমায়ুন ফরীদি (ছবি: ফেসবুক)

এরপরের ঘটনা হুমায়ূন আহমেদ এভাবে জানিয়েছেন, “ফরীদি লাজুক গলায় জানতে চান, ‘আপনি এখানে কী করেন?’ আমি বললাম, আপনার চা খাওয়া দেখি! ফরীদি আমার হাত ধরে বলেন, ‘আশ্চর্য ব্যাপার, মিতা! আসুন তো আমার সঙ্গে।’ তিনি একটি দোকানে নিয়ে গেলেন আমাকে। সেলসম্যানকে তিনি বললেন, ‘আপনার দোকানের সবচেয়ে ভালো কলমটি আমাকে দিন। আমি মিতাকে গিফট করব।’ ফরীদিকে আমি একটি বই উৎসর্গ করেছি। উৎসর্গ পাতায় এই ঘটনা উল্লেখ আছে।”

হুমায়ুন ফরীদি সম্পর্কিত দেশের পাশাপাশি বিদেশের একটি ঘটনা জানিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। সুইডেনের রেস্টুরেন্ট মালিক মানিকের বাড়িতে একদিন নিমন্ত্রণ পেয়ে যান হুমায়ূন আহমেদ। কারণ মানিকের চেহারা অবিকল হুমায়ুদ ফরীদির মতো! তখন হুমায়ূন আহমেদ জানতে পারেন, ফরীদি ও মানিক ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ১৯৭১ সালে তারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছেন। ফরীদি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, এটা হুমায়ূন আহমেদের জানা ছিলো না। মানিকের বাড়ির সবচেয়ে সুন্দর ঘরটির নাম ‘ফরীদি’। ঘরটি তিনি সারাবছর বন্ধুর জন্য সাজিয়ে রাখতেন। ফরীদি ছাড়া অন্য কারো সেই ঘরে প্রবেশাধিকার ছিলো না।

হুমায়ুন ফরীদি (ছবি: ফেসবুক)

বাংলা মঞ্চনাটক, টেলিভিশন ও সিনেমা জগতের অন্যতম সেরা অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির প্রয়াণ দিবস আজ (১৩ ফেব্রুয়ারি)। প্রতিবারের মতোই তাঁকে স্মরণ করেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শিল্পী ও অনুরাগীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্মৃতিচারণ ও ছবি শেয়ার করেছেন অনেকে। এখনো তাঁর শূন্যতা অনুভব করেন সবাই। এমন জাত অভিনেতা যে যুগে যুগে একবারই আসে! মৃত্যুর পর তাঁর জনপ্রিয়তা ও সম্মান যেন আরো বেড়েছে।

১৯৫২ সালের ২৯ মে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন ফরীদি। তাঁর প্রকৃত নাম হুমায়ুন কামরুল ইসলাম। তাঁর বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম, মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।

হুমায়ুন ফরীদি এক সাক্ষাৎকারে জানান, টেলিভিশনে কাজ করে ৪২০-৪২৫ টাকা পেতেন। সেই অর্থ দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব ছিলো। সেজন্যই সিনেমায় কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলা সিনেমার অন্যরকম এক অধ্যায়।

হুমায়ুন ফরীদি (ছবি: ফেসবুক)

২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি হুমায়ুন ফরীদি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। করোনাকালে হুমায়ুন ফরীদির ব্যবহার করা চশমা নিলামে বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ১২ টাকায়। এতেই বোঝা যায়, কিংবদন্তি এই অভিনেতার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ। অনলাইন নিলামে প্রতিযোগিতা করে চশমাটি কিনেছেন হাঙ্গেরিপ্রবাসী একজন বাংলাদেশি। তার দুই মেয়ে। এক মেয়ের জন্মদিন ২৫ তারিখ, আরেক মেয়ের ১২ তারিখ। তাই দুই মেয়েকে উপহার হিসেবে দিতে ৩ লাখ ২৫ হাজার ১২ টাকায় চশমা কিনেছেন তিনি।

চশমাটি হুমায়ুন ফরীদির মেয়ে শারারাত ইসলাম দেবযানীর কাছে সংরক্ষিত ছিলো। স্বাধীনতার পর তার মা নাজমুন আরা বেগম মিনুকে রমনায় বেলী ফুলের মালা পরিয়ে বিয়ে করে সাড়া ফেলে দেন ফরীদি। তাদের সংসার ভাঙার পর অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে বিয়ে করেন ফরীদি। তাদের বিয়েবিচ্ছেদ হয় ২০০৮ সালে।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ