Connect with us

হলিউড

৬৩ বছর আগে ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেওয়া অভিনেতা হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

সিনেমাওয়ালা ডেস্ক

Published

on

হলিউডে চলছে ধর্মঘট (ছবি: টুইটার)

৪৩ বছর পর নতুন ধর্মঘটের সাক্ষী হলো হলিউড। আর ৬৩ বছর পর গোটা হলিউড বন্ধ হয়ে গেলো। স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড–আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টস (এসএজি-এএফটিআরএ) এবং রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ) অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করছেন।  

সর্বশেষ ১৯৮০ সালের জুলাইয়ে এসএজি-এএফটিআরএ সদস্যরা ধর্মঘট করেন। তখন ক্যাবল টেলিভিশন এবং ভিডিওটেপের জন্য নির্মিত টিভি অনুষ্ঠান ও সিনেমা বিক্রির লভ্যাংশকে কেন্দ্র করে প্রযোজক-পরিবেশকদের সঙ্গে ইউনিয়নটির সদস্যদের দ্বন্দ্ব বেঁধেছিলো। উভয় পক্ষ নতুন সমঝোতার শর্তাবলী নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। সেইসব শর্তে দুটি পক্ষের দাবি ও বিভিন্ন বিষয়ে উদ্বেগের প্রতিফলন দেখা যায়।অভিনয়শিল্পীদের সেই ধর্মঘট ১০ সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিলো। এ কারণে প্রায় ১০ কোটি ডলারের লোকসান হয়েছিলো। বর্তমান সময়ে যা প্রায় ৩৭ কোটি মার্কিন ডলারের সমান।

এর আগে ১৯৬০ সালে অভিনয়শিল্পী ও চিত্রনাট্যকারেরা একসঙ্গে ধর্মঘট করেন। তখন চিত্রনাট্যকারেরা ২১ সপ্তাহের জন্য এবং অভিনয়শিল্পীরা ছয় সপ্তাহ কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। সেই সময় এসএজি’কে নেতৃত্ব দেন অভিনেতা রোনাল্ড রিগ্যান। এর অনেক পরে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।

রোনাল্ড রিগ্যান (ছবি: টুইটার)

৬৩ বছর পর আবার হলিউডের দুটি ইউনিয়ন একসঙ্গে ধর্মঘট পালন করছে। এর ফলে অনেক সিনেমা ও জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজের নতুন মৌসুমের কাজ বন্ধ রয়েছে।

চিত্রনাট্যকারেরা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের জন্য নির্মিত কন্টেন্ট থেকে লভ্যাংশ পাওয়ার দাবি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারে কাজ কমে যাওয়ার উদ্বেগ জানিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। একইভাবে স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড (এসএজি) ডিজিটাল প্রতিরূপের মাধ্যমে বেদখল হওয়া থেকে অভিনয়শিল্পীদের নিরাপদ রাখার দাবি তুলেছে। অভিনয়শিল্পীদের বদলি হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সহায়তায় এবং কম্পিউটারে তৈরি মুখ ও কণ্ঠ ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা চায় এসএজি। এছাড়া শীর্ষস্থানীয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে লভ্যাংশের ন্যায্য বিভাজন এবং আরো ভালো কর্মপরিবেশ চায় এসএজি।

হলিউডে চলছে ধর্মঘট (ছবি: টুইটার)

অভিনয়শিল্পীদের ইউনিয়ন সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, আমেরিকান সময় ১২ জুলাই রাতের মধ্যে হলিউডের শীর্ষস্থানীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে তাদের বৈঠক ফলপ্রসূ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু হবে। সেই পথই বেছে নিলেন তারা। আপাতত অভিনয়শিল্পীরা কেউই কোনো কাজ করবেন না। নেটফ্লিক্সের কার্যালয়ের সামনে তাদের সমর্থনে স্লোগান দিয়েছেন চিত্রনাট্যকারেরা।

হলিউডে চলছে ধর্মঘট (ছবি: টুইটার)

ধর্মঘটের কারণে হলিউডের সবকিছু নিস্তেজ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বে নাড়া পড়েছে। আমেরিকান অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যের ৪৭ হাজারের বেশি অভিনয়শিল্পীদের ইউনিয়ন এক্যুইটি।

হলিউডের সংবাদমাধ্যম ভ্যারাইটির তথ্যানুযায়ী, এবারের ধর্মঘট বেশ দীর্ঘায়িত হতে পারে। কারণ প্রথম সারির কিছু অভিনয়শিল্পী নিজেদের ইউনিয়নকে কঠোর পন্থা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। দুই হাজার অভিনয়শিল্পীর সই করা একটি চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, ‘মাঝপথে এসে থেমে যাওয়ার সময় নয় এখন। ইতিহাসের দৃষ্টি আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে আছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না।’

এইচবিও’র ‘সাকসেশন’ সিরিজের অভিনেতা ব্রায়ান কক্সের বিশ্বাস, ধর্মঘট চলতি বছরের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে।

হলিউডে চলছে ধর্মঘট (ছবি: টুইটার)

এসএজি-এএফটিআরএ’র ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে হতাশ হলিউডের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তারা। ডিজনির প্রধান নির্বাহী বব আইজিয়ার বলেন, ‘অভিনয়শিল্পী ও চিত্রনাট্যকারদের দাবি অবাস্তব এবং মহামারি থেকে উতরে ওঠার চেষ্টায় থাকা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য ক্ষতিকর। দুটি ধর্মঘট খুব খারাপ সময় ডেকে এনেছে। এটা খুব বিরক্তিকর।’

ধর্মঘটের প্রতিক্রিয়ায় সিনেমা ও টিভি অনুষ্ঠান প্রযোজকদের জোট অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউচার্স (এএমপিটিপি) জানিয়েছে, ‘অবশ্যই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমরা আশা করিনি। কারণ আমাদের টিভি অনুষ্ঠান ও সিনেমাকে জীবন্ত করে তোলেন অভিনয়শিল্পীরা। তাদের ছাড়া প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। ইউনিয়ন দুঃখজনকভাবে এমন একটি পথ বেছে নিয়েছে, যা শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষকে আর্থিক দুর্দশার দিকে ঠেলে দেবে।’

গত জুন মাসে ডিরেক্টরস গিল্ড অব আমেরিকা একটি চুক্তি নিয়ে সফল আলোচনা করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছেন না পরিচালকেরা।

Advertisement

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ