Connect with us

ওটিটি

অভিনয়ে ফারুকী, বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘অটোবায়োগ্রাফি’

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমার দৃশ্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী (ছবি: চরকি)

ফিল্মমেকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রায় ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে ক্যামেরার পেছন থেকে অনেক কাজ উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। দেশ-বিদেশের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সমাদৃত হয়েছে তার পরিচালিত সিনেমা। এবার এই নির্মাতা এলেন ক্যামেরার সামনে। ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমায় পরিচালনা ও অভিনয় দুই দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তার সঙ্গে পর্দায় থাকছেন বাস্তবের সহধর্মিণী নুসরাত ইমরোজ তিশা।

ফারুকী জানিয়েছেন, ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ২৮তম আসরে প্রতিযোগিতামূলক কিম জিসোক শাখায় নির্বাচিত হয়েছে। উৎসবটিতে এই সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে। আগামী ৪ অক্টোবর এর পর্দা উঠে চলবে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত।

এশিয়ার প্রতিষ্ঠিত ফিল্মমেকারদের নতুন কাজ জায়গা পেয়ে থাকে কিম জিসোক শাখায়। এবারের আসরে রয়েছে ১০টি সিনেমা। এরমধ্যে ফারুকীর সিনেমা ছাড়াও আছে ফিলিপাইনের খ্যাতিমান ফিল্মমেকার ব্রিলান্টে মেন্ডোজার ‘মোরো’, শ্রীলঙ্কার প্রসন্ন ভিতানাগের ‘প্যারাডাইস’, ইন্দোনেশিয়ার ইয়োসেপ অ্যাঙ্গি নোনের ‘অ্যা ডে উইথ গ্যাসপার’ প্রভৃতি।

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমার শুটিংয়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী (ছবি: চরকি)

বুসানে ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার ও উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন ফারুকী, অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, চরকির সিইও রেদওয়ান রনি এবং মিডিয়াস্টার-এর হেড অব স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন জারায়েফ আয়াত হোসেন।

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ প্রসঙ্গে ফারুকী বলেন, “আমি নানান রকম গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সেগুলোর একেকটা একেক রকমভাবে মানুষকে স্পর্শ করেছে। কোনোটা বেশি, কোনোটা হয়তো কম। অভিনয় কেমন হওয়া উচিত আর কোন গল্প বলা জরুরি সেসব নিয়ে সারাক্ষণই নিরীক্ষার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যে কাজটা কখনোই চেষ্টা করিনি, সেটা হলো অভিনয়। তবে ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’র গল্প লেখার সময় থেকেই আমি ও তিশা জানতাম, এতে আমাদের দুইজনকেই অভিনয় করতে হবে। শুরুর দিকে এ নিয়ে আমার মধ্যে ইতস্তত ভাব ছিলো। রেদওয়ান রনি গল্প শোনার পর বললো, এই চরিত্র আমাকেই করতে হবে। তারপরও আমার সংশয় কাটছিলো না। তখন তিশা একটা কথা বলে আমার সংশয় দূর করে দেয়। ও বলে, এই গল্প তুমি জীবনে একবারই করতে পারবে। করে ফেলো, প্লিজ!’ তিশাই আমাকে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করেছে।”

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমার দৃশ্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী (ছবি: চরকি)

প্রথমবার অভিনয় করার অভিজ্ঞতা জানাতে ফারুকী বলেন, ‘অভিনয় তো একটা অরক্ষিত কাজ। আর এই গল্পে অভিনয় তো আরো অরক্ষিত ব্যাপার, যেখানে নিজের জীবনও কোনো না কোনো আঙ্গিকে লুকিয়ে আছে। তবে শুটিং শুরু হয়ে যাওয়ার পর তেমন কোনো আলাদা অনুভূতি হয়নি। মনে হয়েছে, এটাই তো স্বাভাবিক। শুধু একটা দিক অবশ্য আলাদা ছিলো। দৃশ্যধারণের সময় আমি মনিটরে থাকতে পারিনি। আমার ছোট ভাই কিবরিয়া মনিটরে চোখ রাখতো। আমি শুটিং শেষে গিয়ে প্লে-ব্যাক করতাম।’

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমার দৃশ্যে নুসরাত ইমরোজ তিশা (ছবি: চরকি)

সহধর্মিণী যেহেতু সহশিল্পী, সেক্ষেত্রে তিশার কাছ থেকে অভিনয় শিখেছেন কিনা, এমন প্রশ্নে ফারুকী বলেন, ‘অভিনয় শেখার ব্যাপার বলতে পারবো না। কারণ পরিচালক তো সবার আগে দেখতে পায় চরিত্রটা কিভাবে হাঁটে, কথা বলে, কী ভাবনা-চিন্তা করে! ফলে এই চরিত্র কী করবে না করবে সেটা জানতাম। কিন্তু একটা ব্যাপার তো নিশ্চিত, সহশিল্পী যদি অসাধারণ কেউ হন তাহলে অভিনয় সহজ হয়ে যায়। সহশিল্পী তার মান দিয়ে অন্য শিল্পীর মানও ওপরে তুলে নিয়ে যেতে পারেন।’

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমার দৃশ্যে নুসরাত ইমরোজ তিশা (ছবি: চরকি)

শুধু একসঙ্গে অভিনয় নয়, ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমার চিত্রনাট্য ফারুকী-তিশা একসঙ্গে মিলে লিখেছেন। তিশার জন্য চিত্রনাট্য লেখার অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম। তিনি বেশ আনন্দ নিয়েই কাজটি করেছেন বলে জানান।

নুসরাত ইমরোজ তিশা (ছবি: চরকি)

মাতৃত্বের পর এই সিনেমা দিয়েই নুসরাত ইমরোজ তিশা অভিনয়ে ফিরেছেন বলা চলে। তিনি বলেন, ‘ইলহামের জন্মের পর এতো তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করতে পারবো ধারণা ছিলো না। এজন্য ফারুকীকে ধন্যবাদ। ও আমাকে সেই আত্মবিশ্বাস দিয়েছে যে, আমি আবার ফিট হয়ে কাজ করতে পারবো। ইলহাম হওয়ার পর এমন আবেগপ্রবণ গল্পে কাজ করতে পারায় সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করি।’

ফারুকীর সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিশা বলেন, ‘ফারুকী খুব ভালো একজন পরিচালক, পাশাপাশি তিনি ভালো একজন অভিনেতা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সেটা ক্যামেরার পেছনে ছিলো। এখন সেটা সবার সামনে চলে আসছে আর কী! এখন একটু ভয় লাগছে। অন্য পরিচালক যদি ওকে নিয়ে কাজ শুরু করে, ও যদি নায়ক হয়ে যায় তখন কী হবে!’

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমার দৃশ্য (ছবি: চরকি)

দর্শকদের উদ্দেশে ফারুকী বলেন, ‘এতো বছরের ক্যারিয়ারে কয়েকটা প্রজন্মের ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এই সিনেমা আমার ও তিশার সবচেয়ে আত্মভূত গল্প। আপনাদের ভালো লাগলে কিংবা ভাবালে খুশি হবো।’

দর্শকদের জন্য তিশা বলেন, ‘যেকোনো সিনেমা নিয়েই তো অভিনয়শিল্পীদের অনেক প্রত্যাশা থাকে। আমারও আছে। বরং আমার এই প্রত্যাশা অনেক বেশি। যেহেতু এটা আমাদের জীবনে অনেক স্পেশাল ছবি। আমার বিশ্বাস– দর্শকরা এই সিনেমা দেখে হাসবেন, কাঁদবেন, কখনো রেগে যাবেন, কখনো শান্ত হয়ে চিন্তা করবেন এবং অনেক অনেক ভালোবাসা দেবেন আমাদের।’

চরকির ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রকল্পের অংশ ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’। গত ৩ আগস্ট জমকালো অনুষ্ঠানে ১২ জন নির্মাতা ১২টি ভালোবাসার গল্প বলার শপথ গ্রহণ করেন। সবই মুক্তি পাবে চরকিতে। পুরো প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকছেন পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি ইতোমধ্যে ‘লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামী’ নামের অন্য একটি ফিল্মের শুটিং শেষ করেছেন। তার কথায়, ‘অপেক্ষায় আছি কতো দ্রুত দর্শক সিনেমা দুইটা দেখতে পায়!’

চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘ফারুকী ভাইয়ের অভিনয় পর্দায় দেখতে আমরা মুখিয়ে আছি। সেই সঙ্গে আমাদের জন্য গর্বের ব্যাপার হলো, চরকি প্রযোজিত কোনো সিনেমা বুসান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রতিযোগিতায় জায়গা পেয়েছে।’

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ