Connect with us

গান বাজনা

ছায়ানটে পল্লিগীতি শিখেছেন সালমান শাহ, নাটক-সিনেমায় গেয়েছেন গান

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

সালমান শাহ (ছবি: ফেসবুক)

অকালপ্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহ ভক্তদের কাছে এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। দেশীয় সিনেমায় যেন ধূমকেতুর মতো হাজির হয়েছিলেন তিনি। তাকে ঘিরে এখনো উন্মাদনার কমতি নেই। অথচ তিনি নেই ২৭ বছর হয়ে গেলো! না থেকেও যেন বেশি করে আছেন সিনেমার এই বরপুত্র।

১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন সালমান শাহ। মাত্র তিন বছরে তিনি অভিনয় করেন ২৭টি সিনেমায়। সবই দেখতে ঢল নেমেছে দর্শকদের। ফলে এগুলো ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়ে সুপার-ডুপার হিট তকমা পেয়েছে। তাঁর অভিনয় দক্ষতা, চলনে-বলন ও পোশাকে ছিল নতুনত্ব আর আধুনিকতার ছোঁয়া। তরুণদের স্টাইল আইকন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। তাঁর রুচি, অভিব্যক্তি, বাচনভঙ্গিসহ সবই ছিল সময়ের চেয়ে এগিয়ে।

শুধু অভিনয় নয়, গানের সালমান শাহের প্রতিভা ছিলো অন্যরকম। তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর ছোট-বড় দুই পর্দার জন্যই গান গেয়েছিলেন তিনি।

বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের পাশে সালমান শাহ (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

সালমান শাহের বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন বিচারক, মা নীলা চৌধুরী গান গাইতেন ও টিভিতে অভিনয় করতেন। নানা কামরুজ্জামান দেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক সিনেমা ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অভিনেতা ছিলেন। মায়ের পথ ধরে সালমান শাহ গান শিখেছেন ছায়ানটে। ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লিগীতিতে উত্তীর্ণ হন তিনি। বন্ধুমহলে গায়ক হিসেবে তাঁর কদর ছিলো। মাঝে মধ্যে পরিবারের বৈঠকি আসরে গান করতেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানার মতোই অভিনেতা হয়ে যান তিনি।

সালমান শাহ (ছবি: ফেসবুক)

বিটিভির সিলেট কেন্দ্র উদ্বোধনের দিন মায়ের সঙ্গে গিয়ে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীকে ‘সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা, সোনা নয় যতো খাঁটি’ গানটি গেয়ে শোনান সালমান শাহ। আরেকদিন মায়ের সঙ্গে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ বেতারে। তখন শিশুদের গানের অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং হচ্ছিলো। প্রযোজক সালমান শাহকে দিয়ে গাওয়ালেন ‘প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা’ কথার একটি গান।

সালমান শাহ (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

গানের প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা ছিলো সালমান শাহের। গিটার বাজাতে পারতেন তিনি। ১৯৯৪ সালে ধারাবাহিক নাটক ‘ইতিকথা’য় গিটার বাজিয়ে গান করেন তিনি। ‘বজ্র যোগিণী’ শিরোনামের গানটি তাঁর কণ্ঠে সামনে বসে শুনেছেন প্রয়াত গোলাম মোস্তফা এবং প্রবীণ অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ। একই ধারাবাহিকের আরেকটি দৃশ্যে ‘মা’ বিষয়ক একটি ইংরেজি গান গেয়েছেন তিনি।

সালমান শাহ (ছবি: ফেসবুক)

১৯৯৪ সালে নিজের অভিনীত ‘প্রেমযুদ্ধ’ ছবির একটি রোমান্টিক গানে কণ্ঠ দেন সালমান শাহ। এটি হলো ‘তুমি আমার জীবনে এক স্বপ্ন যেন’। এর কথা মৌলিক হলেও সুরটি বলিউডের ‘১৯৪২: অ্যা লাভ স্টোরির’ ছবিতে কুমার শানুর গাওয়া একটি গানের। জীবন রহমানের পরিচালনায় ছবিটিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন লিমা।

সালমান শাহ (ছবি: ফেসবুক)

বড় পর্দায় নাম লেখানোর আগে ১৯৯২ সালে মিউজিক ভিডিওতে মডেল হন সালমান শাহ। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হানিফ সংকেতের ‘কথার কথা’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে মা নীলা চৌধুরীর সঙ্গে কাজটি করেন তিনি। হানিফ সংকেতের গাওয়া গানটির কথা হলো, ‘নামটি ছিলো তার অপূর্ব, কথা আর কাজে ছিলো অপূর্ব, সবকিছু মিলিয়ে বাবা-মার কাছে অপূর্বই ছিলো গর্ব’। ভিডিওটির গল্পে সুদর্শন তরুণ অপূর্ব বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে শেষমেষ মারা যায়।

সালমান শাহ (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)

১৯৮৩ সালে একটি চায়ের বিজ্ঞাপনচিত্রের মাধ্যমে মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সালমান শাহ। এরপর মিল্ক ভিটা, জাগুয়ার, কেডস, গোল্ডস্টার টি, কোকাকোলা, ফানটার বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে তাকে।

সালমান শাহ (ছবি: ফেসবুক)

১৯৮৫ সালে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম নাটক ‘আকাশ ছোঁয়া’ প্রচারিত হয় বিটিভিতে। তাঁর অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘পাথর সময়’। এছাড়া বিটিভির ‘সৈকতে সারস’, ‘ইতিকথা’, ‘দোয়াল’, ‘সব পাখি ঘরে ফিরে’, ‘নয়ন’ এবং ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ নাটকে অভিনয় করেন তিনি।

সালমান শাহ (ছবি: ফেসবুক)

সালমান শাহ পড়াশোনা শুরু করেন খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ (বর্তমান ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) থেকে বি.কম পাস করেন। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রামের মেয়ে সামিরাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন তিনি।

সালমান শাহ (ছবি: ফেসবুক)

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৬ বছর বয়সে সালমান শাহ এমন জায়গায় চলে গেছেন, যেখান থেকে ফেরে না কেউ। সেদিন তরুণ-তরুণীদের স্বপ্নের নায়ক হারিয়ে যান অজানা দেশে। সিলেটের হযরত শাহজালালের (রা.) মাজারের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ