গান বাজনা
বাবার সঙ্গে অভিমানে ঘর ছেড়ে বোর্ডিংয়ে চলে যাওয়া সেই ছেলেটি
বাবা ছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। কিন্তু ছেলের পড়ালেখায় মনোযোগ নেই একেবারেই। গান নিয়েই পড়ে থাকে সারাক্ষণ। রাগী বাবার শাসনের পর অভিমানে কৈশোরে নওগাঁর বাড়ি ছাড়ে সে। চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে গিয়ে ওঠে ছেলেটি। সেখানেই গানের চাষবাস করতে থাকে। ফিলিংস ব্যান্ড গঠন করে গান লেখা, সতীর্থদের সঙ্গে মহড়া, রাতে নাইটক্লাবে সংগীত পরিবেশন– এভাবে কাটতে থাকে দিনরাত। আজিজ বোর্ডিংয়ের ছোট্ট একটি কামরা সাক্ষী হয়ে থাকলো একজন রকতারকার পরিণত হওয়ার। সুরে গানে দেশের কোটি মানুষের প্রিয়জন হয়ে ওঠেন তিনি। সেই ছেলেটি হলেন ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। তার এখন কোটি কোটি ভক্ত-শ্রোতা।
আজ বাংলা সাইকেডেলিক রকের প্রবাদপুরুষ নগর বাউল জেমসের ৫৯তম জন্মদিন। প্রতিবারের মতোই ভক্ত-শ্রোতা ও সংগীতানুরাগীেদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় তার জন্ম।
বাংলাদেশের সংগীত জগতের গৌরবময় এক অধ্যায়ের নাম জেমস। রকতারকা জেমস মানে সুরের তুফান, তারুণ্যের উন্মাদনা, উদ্দীপনা আর বিপুল আবেগ। জেমস মানেই মুগ্ধতা। তার গান শুনে অনেকে খুঁজে পেয়েছেন দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকার দাওয়াই। অনেকের কাছে তার গান যেন অক্সিজেন! তার গানই যেন বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।
জেমস শুধু উজ্জ্বল নক্ষত্রই নন, তিনি নিজেই একটা আকাশ। তিনি একাই একটি সুবিশাল রাজ্য। ভক্তরা তাকে ভালোবেসে ‘গুরু’ বলে ডাকে। ভক্তদের কাছে মনে হয় তিনি বুঝি তাদেরই লোক। কী গ্রাম, কী শহর; জেমস যেন সবার, সারা বাংলাদেশের। ‘যেদিন বন্ধু চলে যাব, চলে যাব বহুদূরে, ক্ষমা করে দিও আমায়, ক্ষমা করে দিও, মনে রেখো কেবল একজন ছিল ভালোবাসতো শুধুই তোমাদের’– এই গান শুনে তাকে আপন ভাববে না কে!
জেমসের গাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গান আছে। এরমধ্যে বাবা ও মাকে নিয়ে সাজানো ‘ছেলে আমার বড় হবে, মাকে বলতো সে কথা’ (বাবা) এবং ‘১০ মাস ১০ দিন ধরে গর্ভে ধারণ’ (মা) সবশ্রেণির শ্রোতাকে আবেগাপ্লুত করে। ‘বাবা’ গানটি যখন করেন জেমস, ততদিনে তার বাবা চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
জেমসের গান সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সোনাঝরা কৈশোরের রোদ্দুরমাখা দিনে। তার পাগল করা কণ্ঠে ‘আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেবো’ গানটি শুনলে সব বয়সী শ্রোতারা বিমোহিত হন। ‘তুমি মিশ্রিত লগ্ন মাধুরীর জলে ভেজা কবিতায়’ গানটি তরুণদের মনে দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত করে।
জেমসের একেকটি গান যেন একেকটি অনবদ্য সৃষ্টি। কী দারুণ কথামালার গান গেয়ে মন ভরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার গানগুলোর আবেদন চিরকালের। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য– ‘পাগলা হাওয়ার তোড়ে’, ‘লিখতে পারি না কোনো গান’, ‘মীরাবাঈ’, ‘কবিতা তুমি স্বপ্নচারিণী হয়ে খবর নিও না’, ‘এই চোখে তাকিয়ো না তুমি লুটপাট হয়ে যাবে’, ‘দুঃখিনী দুঃখ কোরো না’, ‘শোনো, জেল থেকে আমি বলছি’, ‘ঠিক আছে বন্ধু’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘যে পথে পথিক নেই’, ‘মান্নান মিয়ার তিতাস মলম’, ‘পথের বাপ’, ‘পত্র দিও’, ‘হারাগাছের নুরজাহান’, ‘গিটার কাঁদতে জানে’, ‘সিনায় সিনায়’, ‘জিকির’, ‘তের নদী সাত সমুদ্দুর’, ‘সুলতানা বিবিয়ানা’, ‘সুস্মিতার সবুজ ওড়না’, ‘হতেও পারে এই দেখা শেষ দেখা’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘দিদিমনি’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া’, ‘এক নদী যমুনা’– এমন অসংখ্য গানে বুঁদ হয়ে আছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয় ফিলিংস ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। ১৯৮৮ সালে বাজারে আসে জেমসের প্রথম একক অ্যালবাম ‘অনন্যা’। ফিলিংসের ‘জেল থেকে বলছি’ (১৯৯৩), ‘নগর বাউল’ (১৯৯৬), ‘লেইস ফিতা লেইস’ (১৯৯৮), ‘কালেকশন অব ফিলিংস’ (১৯৯৯) অ্যালবামগুলোর সুবাদে তিনি ছড়িয়ে পড়েন পথে-প্রান্তরে, শ্রোতাদের কানে-মননে।
পরবর্তী সময়ে ফিলিংস ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে জেমস নতুন নাম রাখেন ‘নগর বাউল’। এরপর বাজারে আসে ‘দুষ্টু ছেলের দল’ (২০০১) অ্যালবামটি। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো হলো– ‘পালাবে কোথায়’ (১৯৯৫), ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’ (১৯৯৭), ‘ঠিক আছে বন্ধু’ (১৯৯৯), ‘আমি তোমাদেরই লোক’ (২০০৩), ‘জনতা এক্সপ্রেস’ (২০০৫), ‘তুফান’ (২০০৬) এবং ‘কাল যমুনা’ (২০০৮)।
২০০৫ সালে বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায় প্লেব্যাক করেন জেমস। এতে তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০০৬ সালে তিনি ‘ও লামহে’ সিনেমায় গেয়েছেন ‘চল চলে’ গানটি। ২০০৭ সালে ‘লাইফ ইন অ্যা মেট্রো’তে দুটি গান গেয়েছেন। এগুলোর শিরোনাম ‘রিশতে’ এবং ‘আলবিদা’ (রিপ্রাইজ)। সবশেষ ‘ওয়ার্নিং’ সিনেমায় তার গাওয়া ‘বেবাসি’ গানটি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে। এরমধ্যে ‘লাইফ ইন অ্যা মেট্রো’ ও ‘ওয়ার্নিং’ সিনেমার কিছু অংশে বড় পর্দায় তাকে দেখা গেছে।
জিন্স-পাঞ্জাবিতে গিটার হাতে অন্যরকম ফ্যাশন দাঁড় করিয়েছেন জেমস। ২০০০ সালের প্রথম দিকে পেপসির একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে প্রথমবার মডেল হন তিনি। ২০১১ সালে এনার্জি ড্রিংক ব্ল্যাক হর্সের বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে তাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ফটোগ্রাফার হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।
সিনেমায় দারুণ গায়কীর জন্য একাধিকবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন জেমস। ২০১৪ সালে ‘দেশা: দ্য লিডার’ সিনেমার ‘দেশা আসছে’ এবং ২০১৭ সালে ‘সত্তা’ সিনেমার ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ গানের জন্য এই অর্জন উঠেছে তার হাতে। এছাড়া তিনি জিতেছেন সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অনেক স্বীকৃতি।
সিনেমায় জেমসের গাওয়া গানের তালিকায় আরও আছে ‘আসবার কালে আসলাম একা’ (মনের সাথে যুদ্ধ), ‘মাটির ঠিকানা’র টাইটেল ট্র্যাক, ‘এতো কষ্ট কষ্ট লাগে’ (ওয়ার্নিং), ‘বিধাতা’ (সুইটহার্ট), ‘প্রেম ও ঘৃণা’ (জিরো ডিগ্রী)।
-
ছবি ও কথা1 year ago
তাসনিয়া ফারিণের বিয়ের কিছু ছবি
-
বলিউড2 years ago
‘ব্রহ্মাস্ত্র’ নিয়ে ক্যাটরিনার মধুর প্রতিশোধ!
-
নাটক2 years ago
আমেরিকায় ফুরফুরে মেজাজে মেহজাবীন-তানজিন তিশা-ফারিণ
-
ওয়ার্ল্ড সিনেমা1 year ago
বুসানে ফারুকী-তিশার সিনেমা দেখতে দর্শকদের ভিড়
-
ঢালিউড1 year ago
রাষ্ট্রপতি সিনেমাহলে সপরিবারে ‘প্রিয়তমা’ দেখলেন
-
ওয়ার্ল্ড সিনেমা1 year ago
‘জেলার’ হিট হওয়ায় ১০০ কোটি রুপি ও বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার পেলেন রজনীকান্ত
-
ঢালিউড2 years ago
শাকিবের ‘প্রিয়তমা’ কলকাতার এই নায়িকা
-
ঢালিউড2 years ago
‘বিউটি সার্কাস’: এমন চরিত্রে আর অভিনয় করবো না: ফেরদৌস