Connect with us

টালিউড

‘শনিবার বিকেল’ আটকে থাকায় দিলীপ কুমারের উদাহরণ দিলেন আফজাল

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

আফজাল হোসেন

আফজাল হোসেন

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকায় এবার সরব হলেন গুণী অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন। আজ (২৩ আগস্ট) দুপুরে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।

সিনেমা আটকে থাকায় স্বাভাবিকভাবে ফারুকীর মন ভালো নেই। আফজাল হোসেন সেটা উল্লেখ করে ভারতের প্রয়াত অভিনেতা দিলীপ কুমারের একবার মনখারাপ হওয়ার উদাহরণ দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “দিলীপ কুমার ‘গঙ্গা যমুনা” বানিয়েছিলেন ১৯৬১ সালে। এটাই তাঁর প্রথম প্রযোজিত সিনেমা। নিজের লেখা কাহিনি নিয়ে এটি নীতিন বোসের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা করেন তিনি। ‘গঙ্গা যমুনা’ দুই ভাইয়ের গল্প। তাদের মধ্যে গঙ্গা ছিলো ডাকাত। ডাকাত চরিত্রটির ভাষা শুনে তখনকার ভারতীয় সেন্সর বোর্ড বেঁকে বসে। তারা ভেবেছিলেন, এই সিনেমা মুক্তি পেলে হিন্দি ভাষার মহাসর্বনাশ হয়ে যাবে! দিলীপ কুমার তখন মহাতারকা। তাতে কী! বেচারা বোকা বনে গেলেন সিনেমা প্রযোজনা করে। কয়েক মাস ধরে শত চেষ্টা সত্ত্বেও কোনও লাভ হচ্ছে না বুঝে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইন্দিরা প্রধানমন্ত্রীর কন্যা। সেই পরিচয় ছাড়াও নিজের আলাদা একটা অস্তিত্ব তখন গড়ে তুলেছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা ও আলাপ-আলোচনায় কাজ হয়। মুক্তির পর থেকে আজ অবধি ভারতীয় সিনেমার তালিকায় ‘গঙ্গা যমুনা’ বিশেষ হয়ে আছে। হিন্দি ভাষার কোনো ক্ষতি এই সিনেমার মাধ্যমে ঘটেনি।”

আফজাল হোসেনের মন্তব্য, “ফারুকীর চলচ্চিত্র ‘শনিবার বিকেল’ অনেকদিন ধরে আটকা পড়ে আছে। শিল্পের বেলায় আটক শব্দটা খুব বিচ্ছিরি ঠেকে। শিল্পী আঁকবার সময়, লিখতে বসে লেখক বা চিত্রনির্মাণের আগে যদি নির্মাতাকে আটকানো মানুষদের চেহারা ভেবে নিতে হয়; তা দুর্ভাগ্য ও দুর্ভোগের।”

‘গঙ্গা যমুনা’ সিনেমার দৃশ্যে দিলীপ কুমার

‘গঙ্গা যমুনা’ সিনেমার দৃশ্যে দিলীপ কুমার (ছবি-টুইটার)

আফজাল হোসেনের দৃষ্টিতে, ‘মুখে মুখে দেশপ্রেম, দেশ নিয়ে গৌরবের কথা বলতে আমাদের বেশ ভালো লাগে। যাদের ভালো লাগে, তারা নিশ্চয় এটাও বুঝি– আমাদের দেশের মানুষ সংগ্রামী, সচেতন এবং সৃষ্টিশীল। এ ধারণা দুনিয়ার মানুষ যত বেশি জানতে পারবে; দেশ, দেশের মানুষ ততই সম্মানিত, বিশেষ হয়ে উঠবে। চলচ্চিত্র, সংগীত, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির শক্তিতেই দেশ ও দেশের মানুষ কতখানি সমৃদ্ধ তার প্রমাণ মেলে।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে অত্যন্ত প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা মনে করেন আফজাল হোসেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘বিরাট পৃথিবীর চলচ্চিত্র উঠোনে ফারুকীর চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এমন অর্জনের জন্য বিশেষ যোগ্যতা থাকতে হয়। সেই বিশেষ যোগ্যতা তরুণ প্রজন্মের অনেকের রয়েছে বলে বাংলাদেশের নাম বহু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সগৌরবে উচ্চারিত হয়।’

আফজাল হোসেন নিজের স্ট্যাটাসের শেষ ভাগে লিখেছেন, ‘জগতে স্বপ্ন দেখার মানুষ আছে, আছে দুঃস্বপ্ন দেখা এবং দেখানোর মানুষও। যে মানুষ স্বপ্ন দেখে এবং দেখতে চায়, দেখা উপভোগ করে বলে দেখতে পায়। ভয়, দুশ্চিন্তায় কাটানো মানুষের দিন ও রাত দুঃস্বপ্নে কাটবারই কথা। সৃষ্টিকর্তাকে খুব কৌতুকপ্রিয় মনে হয়। দুনিয়ার সবার মধ্যে তিনি স্বপ্ন দেখবার সাধ্য দিতে পারতেন। দেননি। দাবার ছকের মতো সাদা-কালোকে মুখোমুখি রেখেছেন। তবে সান্ত্বনা ও আনন্দের কথা এই– তিনি কোনও সৃজনশীল মানুষের মাধ্যমে কখনোই মানুষের অনিষ্ট ঘটাননি। সৃজনের সুবাদে চিরকালই মানুষের উপকার হয়েছে।’

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী (ছবি-ফেসবুক)

২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডের সনদ পাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও এখনো আটকে আছে ‘শনিবার বিকেল’। অথচ সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা এর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ফেস্টিভ্যালে সমালোচক পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছে এই সিনেমা। এছাড়া মিউনিখ, সিডনিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে এটি। দেশের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ’ হতে পারে এমন আশঙ্কায় সিনেমাটির মুক্তি আটকে দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে রয়েছে।

জাজ মাল্টিমিডিয়া, ছবিয়াল ও ট্যানডেম প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১২টি দেশের অভিনয়শিল্পী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশের জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মামুনুর রশীদ, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক প্রমুখ।

শনিবার বিকেল

‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার দৃশ্যে নুসরাত ইমরোজ তিশা (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ