Connect with us

গান বাজনা

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সৃষ্টি চিরকাল বেঁচে থাকবে: রুনা লায়লা

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

রুনা লায়লা ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার

রুনা লায়লা ও গাজী মাজহারুল আনোয়ার (ছবি: ফেসবুক)

বাংলাদেশের সিনেমায় কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার গাওয়া প্রথম গান ছিলো গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও সুবল দাসের সুরে ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’। লাহোরে থাকাকালেই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘স্বরলিপি’ সিনেমার জন্য তৈরি হয় এটি। পর্দায় এতে ঠোঁট মিলিয়েছেন ববিতা।

বাংলাদেশের সিনেমায় নিজের গাওয়া প্রথম গানের গীতিকবিকে স্মরণ করেছেন রুনা লায়লা। আজ (৪ সেপ্টেম্বর) সোশ্যাল মিডিয়ায়  গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে নিয়ে কিছু কথা লিখেছেন তিনি। তার কথায়, ‘আকাশের অন্যান্য নক্ষত্রের সঙ্গে যোগ দিতে আরেকটি নক্ষত্র আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। নিজের লেখা অসংখ্য গান রেখে গেছেন তিনি, যেগুলো যুগ যুগ বেঁচে থাকবে এবং নতুন প্রজন্ম গাইবে। আমরা উঁচুমাপের একজন প্রতিভাবানকে হারিয়েছি, তবে তাঁর সৃষ্টি চিরকাল বেঁচে থাকবে। তাঁর আত্মার চির শান্তি কামনা করি।’

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের আরও বেশকিছু কালজয়ী গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লা। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য- ‘চঞ্চল হাওয়ারে’ ও ‘একা একা কেন ভালো লাগে না’ (দি রেইন), ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না’ (কসাই), ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম’ প্রভৃতি।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

গাজী মাজহারুল আনোয়ার (ছবি: ফেসবুক)

‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার আর নেই। আজ (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ৩০ ‍মিনিটে তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আজ ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গিয়েছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সেখানেই মাথা ঘুরে পড়ে জ্ঞ‍ান হারান। তার ছেলে উপল আনোয়ার বাবাকে দ্রুত ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। তাঁর মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি ১৯৬৪ সাল থেকে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করতেন। ১৯৬৭ সালে ‘আয়না ও অবশিষ্ট’র মাধ্যমে প্রথমবার সিনেমার জন্য গান লেখেন। তাঁর গীতিকবিতায় কাব্যের সমারোহ, ছন্দের অপূর্ব কারুকাজ ও শব্দের প্রাচুর্য ছিলো নান্দনিক।

‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ ছাড়াও গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’ এবং ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে’ স্থান পেয়েছে বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায়। তাঁর লেখা অসংখ্য কালজয়ী গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়িতে গেলাম’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘আমি ধন্য হয়েছি ওগো ধন্য’, ‘গীতিময় সেইদিন চিরদিন’ প্রভৃতি।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

গাজী মাজহারুল আনোয়ার (ছবি: ফেসবুক)

গাজী মাজহারুল আনোয়ার গীতিকবি সংঘের আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০২ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার পান। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। এছাড়া জিতেছেন পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছিলেন একাধারে দেশবরেণ্য গীতিকবি, সিনেমা নির্মাতা ও কাহিনিকার। দীর্ঘ ৬০ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ২০ হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘নান্টু ঘটক’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। তিনি মোট ৪১টি সিনেমা পরিচালনা করেছেন।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ