Connect with us

বলিউড

বিতর্কের মুখে সরিয়ে নেওয়া হলো আমির ও কিয়ারার বিজ্ঞাপনচিত্রটি

সিনেমাওয়ালা ডেস্ক

Published

on

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান (ছবি: টুইটার)

বলিউড সুপারস্টার আমির খান ও অভিনেত্রী কিয়ারা আদভানি প্রথমবার একসঙ্গে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়ে পর্দায় এসেছেন। ব্যাংকিং সেবার প্রচারণামূলক কাজটি হিন্দু রীতিতে বিয়ের ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে মনে করে বিতর্ক ছড়িয়েছে নেটিজেনরা। হিন্দু উগ্রপন্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ জন্ম নেওয়ায় বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে এইউ ব্যাংক।

ছক ভাঙার ফলে কেউ কেউ বিজ্ঞাপনটিকে দারুণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, মেয়েদের সম্মান দেওয়া ও ভালোবাসা নিয়ে তাদের সঙ্গে ব্যবহার করা এবং তারা যে ছেলেদের চেয়ে আলাদা নয় সেসব বক্তব্য সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে এতে।

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান (ছবি: টুইটার)

কিন্তু বেশিরভাগ নেটিজেনের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনটি বিয়েদের ধর্মীয় রীতি ও ঐতিহ্যকে বিদ্রুপ ও অপমান করেছে। তারা এটি বর্জনের দাবি তুলেছে। হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ‘দি কাশ্মির ফাইলস’ সিনেমার পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীও নিন্দা জানিয়েছেন। বিজ্ঞাপনটি নিয়ে টুইটারে তিনি বলেন, ‘বুঝতে পারছি না কখন থেকে ব্যাংকগুলো সামাজিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য পরিবর্তনের দায়িত্ব পেলো? আমি মনে করি, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিবর্তনে এইউ ব্যাংকের সক্রিয় হওয়া উচিত।’

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান (ছবি: ফেসবুক)

সমালোচকদের অভিযোগ, বিজ্ঞাপনটি হিন্দু ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আঘাত করেছে। এর নিন্দা করা নেটিজেনদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমির খানের নিজের ধর্মকে উপহাস করা কিংবা হালাল ও তিন তালাকের রীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস নেই। তবে তিনি ঠিকই সুবিধামতো হিন্দু ধর্ম নিয়ে ব্যাঙ্গ করেন। মনে হয় যেন হিন্দুদের অনুভূতি ও বিশ্বাসের কোনো ব্যাপার নেই।’

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান (ছবি: ফেসবুক)

আমির খানকে গরু ভক্ষণকারী রাক্ষস মন্তব্য করে আরেকজন বলেন, ‘তিনি নিজেকে ভারতে অনিরাপদ ও তুরস্কে নিরাপদ মনে করেন এবং হিন্দু ধর্মকে অপমান ছাড়া আর কিছুই পারেন না।’

ক্ষুব্ধ অন্য একজনের প্রশ্ন, ‘পরিবর্তনের স্বার্থে ঐতিহ্য বদলানো কি ভালো? আমির খান আবার প্রমাণ করলেন, তিনি হিন্দু ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে চাওয়া মধ্যযুগীয় ইসলামি জুলুমকারীদের চেয়ে আলাদা নন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ঐতিহ্য পরিবর্তনের নামে আমরা নিজেরা কেন এসব সমর্থন করছি?’

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান (ছবি: টুইটার)

এইউ ব্যাংকের বিজ্ঞাপনটিতে আমির খান ও কিয়ারা আদভানি বর-কনের ভূমিকায় মডেল হয়েছেন। গল্পে দেখা গেছে, বিয়ের ভেন্যু থেকে ঘরে ফিরছেন বর-কনে। তারা আলাপ করে, বিদায়ের সময় কেনো কেউ কাঁদলো না! সবশেষে জানা যায়, বিয়ের পর বরের বাড়িতে কনের চিরস্থায়ী হওয়ার সাধারণ রীতির বিপরীতে প্রথা ভেঙে কনের বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় বর। অর্থাৎ কনের অসুস্থ বাবাকে সহায়তার জন্য ঘরজামাই থাকবে বর। এর ট্যাগলাইন ছিলো, ‘পরিবর্তন আমাদের থেকে আসা উচিত।’

আমির খান ও কিয়ারা আদভানি

আমির খান ও কিয়ারা আদভানি (ছবি: টুইটার)

নেটিজেনরা আপত্তি তোলার পর মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র বিজ্ঞাপনটি প্রসঙ্গে নিজের অভিমত দিয়েছেন। তার পরামর্শ, ‘আমার কাছে এটি যথাযথ মনে হয়নি। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা উচিত নয়। এ ধরনের বিজ্ঞাপন নির্মাণের আগে সবার অনুভূতি মাথায় রাখা উচিত।’

আমির খান ও কিয়ারা আদভানি

আমির খান ও কিয়ারা আদভানি (ছবি: টুইটার)

মন্ত্রী বলেন, ‘অভিযোগ ওঠার পর একটি বেসরকারি ব্যাংকের জন্য অভিনেতা আমির খানের বিজ্ঞাপনটি দেখেছি। ভারতীয় ঐতিহ্য ও রীতিনীতি মাথায় রেখে এমন বিজ্ঞাপনে কাজ না করার অনুরোধ করছি তাকে। তার উচিত, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বিজ্ঞাপন এড়িয়ে যাওয়া। আমির খানের বিরুদ্ধে ভারতীয় ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও দেবতাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার কথা বেশি শোনা যাচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে একটি বিশেষ ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত লাগে। কারো অনুভূতিতে আঘাত করার অনুমতি দেওয়া হয়নি তাকে।’

আমির খান ও কিয়ারা আদভানি

আমির খান ও কিয়ারা আদভানি (ছবি: টুইটার)

চলতি মাসের শুরুতে মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র জানান, পৌরাণিক সিনেমা ‘আদিপুরুষ’ থেকে হিন্দু দেবতা হনুমানের চামড়ার পোশাক পরা দৃশ্য সরিয়ে না নিলে নির্মাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তার মন্তব্য, ‘এ ধরনের দৃশ্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে।’

৫৭ বছর বয়সী আমির খানের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এটাই প্রথম নয়। তার সবশেষ সিনেমা ‘লাল সিং চাড্ডা’ অনলাইন বয়কট প্রচারণার রোষানলে পড়ে। ২০১৫ সালে ভারতে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেই মন্তব্যকে সামনে এনে ‘লাল সিং চাড্ডা’ বর্জনের আহ্বান জানায় উগ্রপন্থীরা। যদিও তিনি তখন স্পষ্ট করেন যে, নিজের দেশ ভারতকে ভালোবাসেন।

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান

কিয়ারা আদভানি ও আমির খান (ছবি: ফেসবুক)

গত বছর একটি টায়ারের বিজ্ঞাপনে কাজ করে সমালোচিত হন আমির খান। কারণ এতে তিনি হিন্দুদের দীপাবলি উৎসব চলাকালীন রাস্তায় পটকা ফাটানো থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন।

কোনো ব্র্যান্ডের বাণিজ্যিক প্রচারণা নিয়ে সমালোচনার ঘটনা আরও আছে। ২০২০ সালে ভারতের জুয়েলারি ব্র্যান্ড তানিষ্কের একটি বিজ্ঞাপনে ভিন্ন দুই ধর্মের এক দম্পতিকে তুলে ধরা হয়। এরপর বিতর্ক সৃষ্টি হলে সেটি সরিয়ে নেয় জুয়েলারি ব্র্যান্ডটি। গত বছর অভিনেত্রী আলিয়া ভাট একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করায় সমালোচনার সম্মুখীন হন। কারণ এতে হিন্দু বিয়েতে কন্যাদানের (বধূকে বিসর্জন দেওয়া) রীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছিল।

আমির খান

‘লাল সিং চাড্ডা’ সিনেমার দৃশ্যে আমির খান (ছবি: প্যারামাউন্ট পিকচার্স)

এদিকে আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’ ভারতের সিনেমা হলে সুবিধা করতে না পারলেও নেটফ্লিক্সে বাজিমাত করেছে। এটি বৈশ্বিক ইংরেজি ভাষার বাইরের সিনেমার তালিকায় দুই নম্বরে আছে। নেটফ্লিক্সে এটি ৬.৬৩ মিলিয়ন ঘণ্টা দেখা হয়েছে।

গত ৬ অক্টোবর নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর বিশ্বজুড়ে দর্শকদের কাছ থেকে সমাদর, ভালোবাসা ও প্রশংসা অর্জন করেছে সিনেমাটি। একসপ্তাহের মধ্যে এটি ভারত নেটফ্লিক্সের এক নম্বরে চলে এসেছে। বাংলাদেশ, মরিশাস, সিঙ্গাপুর, ওমান, শ্রীলঙ্কা, বাহরাইন, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১৩টি দেশে শীর্ষ দশে আছে এটি।

লাল সিং চাড্ডা

‘লাল সিং চাড্ডা’ সিনেমায় কারিনা কাপুর খান ও আমির খান (ছবি: প্যারামাউন্ট পিকচার্স)

‘লাল সিং চাড্ডা’ হলো অস্কারজয়ী সিনেমা ‘ফরেস্ট গাম্প’-এর হিন্দি রিমেক। একজন সাধারণ মানুষের অসাধারণ গল্প এটি। অদ্বৈত চন্দনের পরিচালনায় এতে আরও অভিনয় করেছেন কারিনা কাপুর খান, নাগা চৈতন্য, মোনা সিং, মানব বীজ।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ