Connect with us

নাটক

বছরজুড়ে যেন কাজলের মতো কিছু কাজ করতে পারি: মেহজাবীন

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

নতুন বছরের প্রথম দিনেই দর্শকদের মন আরেকবার ছুঁয়ে দিলেন অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত ভিকি জাহেদের ‘কাজলের দিনরাত্রি’ টেলিফিল্মে কাজল চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন তিনি। কাজল ২৪ বছরের তরুণী হলেও ঘটনাক্রমে তার বয়স আটকে আছে শৈশবে। মানসিক প্রতিবন্ধীর ভূমিকায় মেহজাবীনের অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় নাটক-টেলিফিল্মের গ্রুপগুলোতে বছরের প্রথম নাটকটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ দর্শকরা।

সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই টেলিফিল্মে আরও অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব, সামিয়া অথৈ, শিরিন আলম, আদনান চৌধুরী। ভিকি জাহেদের সঙ্গে মিলে চিত্রনাট্য করেছেন জাহান সুলতানা। নিজের নতুন কাজটি নিয়ে সিনেমাওয়ালা নিউজের আলাপচারিতায় অংশ নিয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী।

‘কাজলের দিনরাত্রি’ টেলিফিল্মে মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: দীপ্ত টিভি)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘কাজলের দিনরাত্রি’ নাটকের কাজল চরিত্রটির জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
মেহজাবীন চৌধুরী: কাজল চরিত্রটির জন্য অবশ্যই আমাকে আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। কারণ চরিত্রটি একেবারেই আলাদা। চিত্রনাট্য জানার পরই সিদ্ধান্ত নিই এই কাজটি আমাকে করতে হবে এবং এজন্য যতোটুকু সময় ও পরিশ্রম প্রয়োজন ততোটাই দিতে চেয়েছি। এ কারণে ঈদুল আজহার কাজগুলো শেষের পর আর কোনো কাজ করিনি। ‘কাজলের দিনরাত্রি’র শুটিং হয় গত বছরের আগস্টে। ঈদুল আজহার পর থেকে এই নাটকের শুটিং পর্যন্ত আমার হাতে এক মাস সময় ছিলো, সেই পুরোটা সময় এই চিত্রনাট্য নিয়েই ভেবেছি। ভিকি জাহেদ ভাইয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ফোনে ও সামনাসামনি আলাপ হয়েছে। কারণ কাজল চরিত্রটি চ্যালেঞ্জিং এবং আমার জন্য পুরোপুরি নতুন ধরনের ছিলো। যেহেতু ভিন্ন ধরনের ছিলো, তাই ওভার অ্যাক্টিং করতে চাইনি। সত্যি বলতে নিজেই বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে এই চরিত্র ফুটিয়ে তুলবো।

‘কাজলের দিনরাত্রি’ টেলিফিল্মে মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: দীপ্ত টিভি)

তারপর ধীরে ধীরে কিছু হোমওয়ার্ক করলাম। কাজল চরিত্রটি সারাদিন কিংবা রাতে কী কী করতে পারে সেই তালিকা সাজিয়েছি। এগুলো নাটকটির সঙ্গে বেশ মিলে যায়। কাজল দিনে কী করবে, রাতে কী করবে; মনে মনে সেই তালিকা করেছিলাম। কাজল কী খেতে পছন্দ করে, কী দিয়ে খেলতে পছন্দ করে, কাজল কখন ঘুম থেকে ওঠে, কখন ঘুমায়, কখন কার সঙ্গে কথা বলতে চায়, ঘুরতে চায়– এসব বিষয় নোট করেছিলাম। সেভাবেই আমরা এই চরিত্রটি দাঁড় করিয়েছি। সত্যি বলতে শুটিংয়ে কীভাবে কী হয়েছে আমি নিজেও জানি না! পুরো ইউনিটের মধ্যেই ভালো কাজের চেষ্টা ছিলো।

মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ইউনিভার্সিটির সামনে এবং কারাগারে রক্তের দৃশ্য দুটিতে আপনি অসাধারণ অভিনয় করেছেন। এই দুটি দৃশ্যে কীভাবে এত দারুণ মানিয়ে নিলেন?
মেহজাবীন:এপিলেপসি তথা মৃগী একটি নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুবিক রোগ, যাতে খিঁচুনি হয়। ‘কাজলের দিনরাত্রি’তে এমন দুটি দৃশ্য আছে। এগুলোতে নিখুঁত অভিনয় করা আমার জন্য বেশ কঠিন ছিলো। কারণ এপিলেপসি হলে মানুষের মধ্যে কী ঘটে সেটা যার হয় তিনিই বুঝতে পারেন। এমন অভিজ্ঞতা আমার কখনও হয়নি। আমার আশেপাশের কাউকেও দেখিনি। তাই এমন দৃশ্য আমার জন্য পুরোপুরি নতুন একটি বিষয় ছিলো। ভিকি জাহেদ ভাই আমাকে এপিলেপসির ব্যাপারে বুঝিয়েছেন। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, এপিলেপসি হলে মানুষ কেমন করে। কারণ একেকজন একেক রকম প্রতিক্রিয়া দেখায়। ফলে এ নিয়েও গবেষণা করতে হয়েছে। এরপরই অভিনয়ের জন্য ক্যামেরার সামনে এসেছি। এ দুটি দৃশ্যের জন্য আলাদাভাবে প্রশংসা পাচ্ছি।

মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ‘কাজলের দিনরাত্রি’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ দর্শকরা। এরমধ্যে কার কোন প্রশংসা আলাদাভাবে আপনার মন ছুঁয়েছে?
মেহজাবীন: সত্যিই প্রশংসা অনেক বেশি হচ্ছে। এতোটাই হচ্ছে যে, বলা যায় প্রতি মিনিটে তিন-চারটি পেজ থেকে ট্যাগ ও মেনশন আসছে। আমার ফেসবুক পেজ যিনি পরিচালনা করেন তিনি আমাকে বলেছেন, এর আগে আমার কোনো নাটক-টেলিফিল্মের বেলায় এমন অভূতপূর্ব সাড়া আসেনি। ‘কাজলের দিনরাত্রি’ দেখে অনেকে ইতিবাচক রিভিউ দিয়েছেন।

মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

যারা খুব একটা আমার কাজ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান না, অনেক বেশি কাজ নিয়ে আলাপ হয় না তারাও টেলিফিল্মটি দেখে আমাকে বলেছেন কাজটি ভালো হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য এমন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া খুব ভালো লাগার বিষয়। আমার পরিবার থেকে শুরু করে বন্ধু-আত্মীয় সবাই ‘কাজলের দিনরাত্রি’ অনেক পছন্দ করেছেন। আম্মু আমার সব কাজ দেখেন, তবে তিনি মাত্র কয়েকবার ভালো লাগার কথা আমাকে সরাসরি জানিয়েছেন। তার মুখে এমন কথা শুনেছিলাম ‘চিরকাল আজ’, ‘বড় ছেলে’, ‘ইতি মা’ নাটক তিনটির ক্ষেত্রে। ‘কাজলের দিনরাত্রি’ দেখে আম্মু অনেকদিন পর বলেছেন, আমার অভিনয় ভালো হয়েছে। তার মুখ থেকে এই কথা শোনা আমার জন্য আলাদা একটা অনুভূতি।

মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

সত্যি বলতে, সবার কাছ থেকেই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমার মনে হয়, এতোটা সাড়া আগে কখনো পাইনি। ২০১৭ সালে ‘বড় ছেলে’র জন্য অনেক সাড়া পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা ছিলো আমার জন্য প্রথম। ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল নাটকটি। আমরা মূলত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি কোন কাজ এগিয়ে বা পিছিয়ে আছে, সেই জায়গা থেকে এবং ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী ‘কাজলের দিনরাত্রি’ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে আছে।

মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: ভিকি জাহেদের পরিচালনায় ‘পুনর্জন্ম’ ফ্র্যাঞ্চাইজির নিয়মিত মুখ আপনি। ‘রেডরাম’ ওয়েব ফিল্মেও আপনারা একসঙ্গে কাজ করেছেন। তার নির্মাণের বিশেষত্ব কী?
মেহজাবীন: ভিকি জাহেদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার বেশকিছু কাজ হচ্ছে। এর কারণ আমি নিজেও জানি না। তিনিই হয়তো এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু আমার মনে হয়, আমাদের দুইজনের মধ্যে একটা মিল আছে। সেটি হলো আমাদের দুইজনেরই সাসপেন্স-থ্রিল ভালো লাগে। আমরা যখনই কোনো কাজ নিয়ে দেখা কিংবা আলোচনা করি, তখন আমাদের চিন্তার জায়গা থেকে ওই মিল প্রকাশ পায়। যেহেতু আমাদের চিন্তাভাবনা একইরকম, কাজের ক্ষেত্রে লক্ষ্যটাও মিলে যায়। তাই তার পরিচালনায় কাজ করাটা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য।

মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

যার সঙ্গে আমার কাজের চিন্তাধারার মিল পাবো অবশ্যই তার সঙ্গে কাজ করতে স্বচ্ছন্দে থাকবো। সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয়, আমাদের একসঙ্গে নিয়মিত কাজ করা হচ্ছে। ভিকি জাহেদ ভাই আমাকে দিয়ে কেনো কাজ করেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমার মনে হয়, আমি যে ধরনের কাজ কিংবা গল্প চাই, একই ধরনের কাজ তিনিও করতে চান। ওই জায়গাতেই আসলে আমাদের মিলে যায়। তাছাড়া তিনি দারুণ তরুণ একজন নির্মাতা, যার স্বপ্ন অনেক বড়। আমার প্রত্যাশা, নিজের ক্যারিয়ার তিনি খুব সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তার জন্য সবসময় আমার শুভকামনা থাকবে।

মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: কাজলের প্রিয় রঙ হলুদ। ব্যক্তিজীবনে আপনি কোন রঙকে লাকি চার্ম মনে করেন?
মেহজাবীন: খুব ইন্টারেস্টিং একটা প্রশ্ন। ব্যক্তিজীবনে হলুদ আমার পছন্দের রঙ হবে কখনও কল্পনা করতে পারিনি। হলুদের প্রতি আমার কখনো আলাদা ভালো লাগা ছিলো না। কিন্তু কাজল চরিত্রে অভিনয় করে যেহেতু এতো প্রশংসা ও ভালোবাসা পাচ্ছি, তাই হলুদের প্রতি এখন আমার একটি দুর্বলতা কাজ করবে। কারণ কাজল মানে আমি, আমি মানে কাজল। সেই জায়গা থেকে এটা বলছি। ব্যক্তিজীবনে আমার পছন্দের রঙ গাঢ় সবুজ, মেরুন ও নিয়ন। এখন থেকে হলুদ যুক্ত হলো এই তালিকায়।

মেহজাবীন চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

সিনেমাওয়ালা নিউজ: নতুন বছরের পরিকল্পনা কী?
মেহজাবীন: সত্যি বলতে পরিকল্পনা করে যা চাই এবং সেটা পেয়ে যাই– ব্যাপারটা তেমন হয় না মোটেও। তবে আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আমার ইচ্ছে কী? তাহলে বলবো– নতুন বছর যেমন এতো প্রশংসা পাওয়া সুন্দর একটি কাজ দিয়ে শুরু হলো, বছরজুড়ে যেন এরকম বেছে কিছু কাজ করতে পারি। আমার চাওয়া, সেগুলোও ‘কাজলের দিনরাত্রি’র মতোই ভালোবাসা পাবে কিংবা আমি যেন ভালো পারফর্ম করতে পারি। আমার কাছে ভালো ভালো গল্প-চিত্রনাট্য আসুক, সাহসী ও ভিন্ন ধরনের পাণ্ডুলিপি আসুক। এছাড়া দেশ-বিদেশ ঘুরতে চাই। পরিবার নিয়ে থাকতে চাই এবং সুস্থভাবে থাকতে চাই।

Advertisement

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ