Connect with us

টালিউড

‘পদাতিক’: কলকাতায় যাওয়ার সময় আবেগপ্রবণ চঞ্চল

সিনেমাওয়ালা রিপোর্টার

Published

on

মৃণাল সেন ও চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

ভারতীয় পরিচালক সৃজিত মুখার্জির পরিচালনায় ‘পদাতিক’ সিনেমার শুটিং করতে কলকাতায় গেলেন বাংলাদেশের অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। এতে কিংবদন্তি পরিচালক মৃণাল সেনের ভূমিকায় অভিনয় করবেন তিনি। আজ (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি জানিয়েছেন জনপ্রিয় এই তারকা। সেইসঙ্গে বাবাকে হারানোর শোক ভেসে উঠেছে তার মনের কথায়।

চঞ্চল চৌধুরী ফেসবুকে লিখেছেন, “যখনই কোনো কাজে দেশের বাইরে যাই, বিমান ছাড়ার আগে মা-বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলে বিদায় নিই। আজও যাচ্ছি, কিন্তু… আর কোনোদিন বাবাকে ফোন করে বলা হবে না। জিজ্ঞাসা করা হবে না, বাবা, তোমার জন্য কী আনবো? বাবার একটাই উত্তর ছিলো, ‘চেইনের ঘড়ি।’ শেষবার বাবার জন্য পছন্দ হয়েছিলো বলে একসঙ্গে দুটি ঘড়ি এনেছিলাম। ঘড়ি দুটো আর বাবার হাতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই বাবা সকল সময়ের হিসেব-নিকেশ মিটিয়ে আকাশের তারা হয়ে গেলো। জাগতিক সময়ের বেড়াজাল পেরিয়ে আমাদের বাবা অসীম সময়ের যাত্রী হয়ে গেলেও বাবার ঘড়ির কাটাগুলো এখনও টিকটিক করে আমার ঘরে। আজ রওনা হয়েছি কলকাতার পথে। উদ্দেশ্য ‘মৃনাল সেন’। ‘পদাতিক’…সৃজিত মুখার্জির সিনেমায় অভিনয়।”

গত ১১ জানুয়ারি চঞ্চল চৌধুরী ও সৃজিত মুখার্জিকে শুভকামনা জানিয়েছেন বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চন। একইসঙ্গে ‘পদাতিক’ সিনেমার প্রচারণামূলক পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন তিনি। টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে চঞ্চল, সৃজিত ও তাদের সিনেমার নাম হ্যাশট্যাগে জুড়ে দিয়েছেন বিগ বি।

দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাসে সেই প্রসঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, “কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ‘পদাতিক’-এর জন্য তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে শুভকামনা জানিয়েছেন একসপ্তাহ আগেই। তাঁর প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম ও কৃতজ্ঞতা। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রেরণা ও আশীর্বাদ। আমার শুভানুধ্যায়ীরা অনেকেই অমিতাভজি’র সেই পোস্ট শেয়ার করে আনন্দ আশীর্বাদের অংশীদারও হয়েছেন।”

চঞ্চল চৌধুরী

কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ২৮তম আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান ও রানি মুখার্জির পাশে চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

সম্প্রতি ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী আয়োজনে অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খানের সঙ্গে একমঞ্চে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। উৎসব থেকে ফিরতেই বাবাকে হারান তিনি। এ কারণে মৃণাল সেনের মতো কিংবদন্তির চরিত্রে অভিনয়ের ঘোষণা, অমিতাভ বচ্চনের শুভকামনাসহ ভক্তদের প্রশংসাসহ কিছুই তার মধ্যে তেমন উচ্ছ্বাস জোগাতে পারেনি।

বাবার সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

চঞ্চল ফেসবুকে আরো লিখেছেন, “বাবার মৃত্যু আমাকে এতটাই মানসিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে যে, কোনো আনন্দেই আমি সান্ত্বনা পাচ্ছি না। কয়েকদিন আগে ‘পদাতিক’-এর ফার্স্টলুক প্রকাশ পাওয়ার পরেও আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের উচ্ছ্বাস দেখে আপ্লুত হয়েছি। এত এত মানুষের আশীর্বাদ আর ভালোবাসা নিয়ে যখন নতুন কর্মযজ্ঞে অংশ নিতে চলেছি, তখন বারবার বাবার মুখটাই চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আর চোখ দুটো বাঁধ না মানা জলে ভরে উঠছে। আমার বিশ্বাস বাবা সব দেখতে পাচ্ছে। তাঁর আশীর্বাদের হাত দুটো আমার মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছে।”

চঞ্চলের কথায়, ‘অনেক গুরুদায়িত্ব আমার কাঁধে। সফল হলে আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষী অনেক খুশি হবেন আমার বিশ্বাস। বাবার আশীর্বাদ আর শক্তি এবং সকলের প্রেরণায় এগিয়ে চলি নতুন পথে।’

মৃণাল সেনের ভূমিকায় চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

চলতি বছরের ১৪ মে মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে তৈরি হচ্ছে ‘পদাতিক’। গত বছরের ১৪ মে মৃণাল সেনের জীবনে অনুপ্রাণিত একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণের ঘোষণা দেন সৃজিত মুখার্জি। পরে এটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা হিসেবে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ‘পদাতিক’ সিনেমার একটি পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন সৃজিত মুখার্জি। এতে দেখা গেছে, একটি বড় রাস্তায় পাজামা-পাঞ্জাবি পরে হেলে আছেন মৃণাল সেন। তার নিচে লেখা ‘পদাতিক’। এতে উল্লেখ রয়েছে চঞ্চল চৌধুরীর নাম। ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন এবং বিগ স্ক্রিন প্রোডাকশনের ব্যানারে তৈরি হবে এটি।

চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: ফেসবুক)

‘পদাতিক’ নামটি মৃণাল সেনের একটি সিনেমার নাম থেকে নেওয়া। কলকাতা শহরকে নিয়ে ট্রিলজি নির্মাণ করেছিলেন তিনি। এগুলো হলো ‘ইন্টারভিউ’ (১৯৭১), ‘কলকাতা ৭১’ (১৯৭১) এবং ‘পদাতিক’ (১৯৭৩)।

‘পদাতিক’ হতে যাচ্ছে কলকাতায় চঞ্চলের প্রথম সিনেমা। এতে তার সঙ্গে জুটি বাঁধবেন কলকাতার অভিনেত্রী মনামী ঘোষ। মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনের ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে।

‘কারাগার’ ওয়েব সিরিজে চঞ্চল চৌধুরী (ছবি: হইচই)

গত বছরের আগস্টে ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার পার্ট-১’ দেখে চঞ্চল চৌধুরীর ভূয়সী প্রশংসা করেন সৃজিত মুখার্জি। কোনো বাক্য উচ্চারণ না করেও সাত পর্বের পুরো সিরিজ জুড়ে অনবদ্য অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। যেন কিছু না বলেই কতো কথা বলে দিলেন! সোশ্যাল মিডিয়ায় সৃজিত লিখেছেন, ‘অভিনয় শেখার প্রতিষ্ঠানে চঞ্চল চৌধুরীর চোখ সংরক্ষণ করলে আগামী প্রজন্ম শিখতে পারবে।’

সৃজিতের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তখন অনেক ভক্ত-দর্শক চঞ্চল চৌধুরীকে নিয়ে ভালো গল্পের সিনেমা কিংবা ওয়েব সিরিজ বানাতে আহ্বান জানান। দুই বাংলার এই দুই প্রতিভার রসায়ন দেখতে উন্মুখ ছিলেন সবাই। তাদের সেই প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে।

সিনেমাওয়ালা প্রচ্ছদ